এই সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ- বজ্রপাত

by - May 29, 2018








বেশ কয়েকদিন ধরে খুব বেশী বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর শিকার হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিকরা।




বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্ষা আসার আগমুহূর্তে এপ্রিল-মে মাসে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুস্ক বায়ুর মিলনে কালবৈশাখী বয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ঝড়ের সময় বেশি বজ্রপাত ঘটে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ধাতব পদার্থের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, বনভূমি কমে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট ও নদী শুকিয়ে যাওয়া বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ।




গত দুই মাসে বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছুঁই ছুঁই করছে। যার ৯০ শতাংশই কৃষক। এ সময়ে বজ্রপাতে আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৩০০ মানুষ। এদের মধ্যে কারও শরীরের আংশিক, কারও সম্পূর্ণ অংশ পুড়ে দগদগে ক্ষত তৈরি হয়। এই ক্ষত সারানোর সুযোগ না পেয়ে ভাগ্যাহত এসব মানুষের স্বপ্ন এবং সম্ভাবনাও পুড়ে শেষ হয়ে যায়।

বজ্রপাতের সময় প্রায় ৬০০ মেগাভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য ১০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ যথেষ্ট। আওয়াজ হওয়ার আগেই বজ্র মাটি স্পর্শ করে। তাই বোঝার আগেই আক্রান্ত হন অনেকে। বজ্রপাতে মাত্র ১ সেকেন্ডেরও কম সময়ে একজন মানুষের মৃত্যু হয়। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করাও বিপজ্জনক। এ কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে গিয়েও দগ্ধ হন অনেকে।

ভারতীয় আবহাওয়া অফিস ও জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার ৪০০ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৩০০ মানুষ মারা যান। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ২৫ মিলিয়ন বজ্রপাত হয়। কিন্তু সেখানে মৃতের সংখ্যা ৪০-৫০ জন। নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে এবং জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভেনিজুয়েলার মারাকাইবো লেক এলাকায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞানের অধ্যাপক এমএ ফারুকের নেতৃত্বে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বছরে দুই থেকে আড়াইশ'।




সরকারিভাবে বজ্রপাতের ক্ষতি কমাতে দেশব্যাপী ৩২ লাখ তাল বীজ রোপণ করা হয়েছে। বজ্রপাত বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে টিলিভিশনে প্রচার চালানো হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা ও হাওরাঞ্চলে নিবিড় টিলা তৈরি করা হবে।

বজ্রপাত থেকে জানমালের ক্ষতি কমাতে আগাম সতর্কবার্তা দিতে দেশের ৮টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বজ্রপাতের অন্তত ১০-১৫ মিনিট আগে এর সংবাদ জানা যাবে। তাৎক্ষণিকভাবে সেই তথ্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ও মোবাইলে ওয়েদার অ্যাপের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। দেখার বিষয় অনগ্রসর গ্রামীণ মানুষদের জন্য এটা কতটা সুফল বয়ে আনে।

পরিসংখ্যান বলছে, বজ্রপাতে নিহতের চেয়ে আহতের সংখ্যা অন্তত দশগুণ বেশি। বজ্রপাতে আহত রোগীদের চিকিৎসা প্রক্রিয়া জটিল। বাংলাদেশে বজ্রপাতে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা নেই। পাওয়া যায় না ওষুধপত্রও। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বজ্রপাতের আহতদের বিদ্যুৎস্পর্শে ও আগুনে পোড়া রোগীদের প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। গ্রামাঞ্চলে বজ্রপাতে আহতের সংখ্যা বেশি। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে এ-সংক্রান্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়।




তাই বজ্রপাত চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও এর ক্ষয়ক্ষতিরোধকল্পে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের প্রয়োগ বেশী গুরত্বপুর্ণ।

You May Also Like

0 comments