সেলসিয়াস স্কেল চেনে না কে? বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে সবাইকেই এই স্কেল নিয়ে পড়তে হয়।
আজকে এই স্কেলের প্রণেতা এন্ডার্স সেলসিয়াস এর জন্মদিন । জন্ম: ২৭ নভেম্বর, ১৭০১ - মৃত্যু: ২৫ এপ্রিল, ১৭৭৪)
এই বিজ্ঞানীর জীবনী নিয়ে উইকিপিডিয়ায় লেখা আছে। তাই বেশীকিছু না লিখে আমরা বরং অন্যদিকে নজর দিই।
বিশ্বের প্রতিটি দেশ তাপমাত্রা মাপে সেলসিয়াসে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র বাদে। যুক্তরাষ্ট্র মাপে ফারেনহাইটে। সেলসিয়াস একটা যুক্তিসঙ্গত মাপকাঠি। সেলসিয়াসে হিমাঙ্ক ধরা হয় শূন্য ডিগ্রী আর স্ফুটনাঙ্ক ১০০ ডিগ্রী। অন্যদিকে ফারেনহাইটের হিসাবটা আবার বিদঘুটে। ফারেনহাইটে হিমাঙ্ক ধরা হয় ৩২ ডিগ্রী আর স্ফুটনাঙ্ক ২১২ ডিগ্রী। আগের ফারেনহাইটে হিসাব বাদ দিয়ে সবাই মেট্রিক পদ্ধতিতে চলে যাওয়ার সময় থেকে সেলসিয়াসের হিসাব চালু হয়েছে। শুধু আমেরিকাই গোঁ ধরে আগের ফারেনহাইট হিসাবটা আঁকড়ে আছে। অথচ এর পরিণতি অনেক সময় বিপর্যয়করও হয়েছে। মার্কিন হিসাব আর মেট্রিক হিসাবের মধ্যে রূপান্তরের একটি বিভ্রাটে নাসার সাড়ে ১২ কোটি ডলার মূল্যের একটি নভোযান মঙ্গলগ্রহের বায়ুম-লে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তাপমাত্রা পরিমাপের এমন এক প্রাচীন ব্যবস্থা আঁকড়ে ধরে আছে কেন? এর জন্য দায়ী হলো ইতিহাসের সর্বকালের দুই বড় ভিলেনÑ ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ ও মার্কিন কংগ্রেস।
অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে অর্থাৎ আজ থেকে ৩শ’ বছর আগেও ফারেনহাইট পদ্ধতিটা সত্যিই খুব দরকারী ও কার্যকর ছিল। এই পদ্ধতির আবিষ্কর্তা ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট নামে এক জার্মান বিজ্ঞানী। তরুণ বয়স থেকে তিনি থার্মোমিটার নিয়ে বেশ আচ্ছন্ন ছিলেন। কারণ সে সময় তাপ মাপার ব্যাপারটা এক বড় সমস্যা ছিল। ২৮ বছর বয়সে একজোড়া থার্মোমিটার তৈরি করে তিনি বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। দুটো থার্মোমিটার একই রিডিং দিয়েছিল। এর আগে কেউ এ কাজ করেনি। তাঁর ব্যবহৃত স্কেলকেই আজ বলা হয় ফারেনহাইট।
পানি ও লবণের দ্রবণ যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় ঘটে, ফারেনহাইট সেটাকে ধরেছিল শূন্য ডিগ্রী। তিনি মানুষের শরীরের গড় তাপমাত্রা পরিমাপ করেছিলেন ৯৬ ডিগ্রী, যদিও তা ঈষৎ বেঠিক ছিল। ফারেনহাইটের হিসাব অনুযায়ী স্ফুটনাঙ্ককে ২১২ ডিগ্রী ও হিমাঙ্ক ৩২ ডিগ্রীতে ধার্য করা হয়।
১৭২৪ সালে ফারেনহাইট ব্রিটিশ রয়াল সোসাইটির সদস্যপদ লাভ করেন এবং তাঁর পদ্ধতি গোটা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অনুসৃত হয়। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে বিশ্বের বিশাল ভূখ- ব্রিটেনের করতলগত হয়। এর ফলে তাপামাত্রা পরিমাপের ফারেনহাইট পদ্ধতিও বিশ্বের অধিকাংশ এলাকায় আদর্শ তাপমাত্রায় পরিণত হয়।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে তাপামাত্রা পরিমাপের আধুনিক মেট্রিক পদ্ধতি ‘সেলসিয়াস’ চালু হয়ে যায়। সেলসিয়াস পদ্ধতি ১৭৪২ সালে আবিষ্কার করেছিলেন সুইডিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এন্ডার্স সেলসিয়াস। ১৯৭০ সালে সেলসিয়াস পদ্ধতিকে মেট্রিক পদ্ধতির অঙ্গীভূত করা হয়। সহজ-সরল রূপ ও বৈজ্ঞানিক উপযোগিতার কারণেই মেট্রিক পদ্ধতি এবং সেই সঙ্গে সেলসিয়াস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্যে সকল পরিমাপ মেট্রিক পদ্ধতিতে শুরু হয় ১৯৬৫ সালে। ব্রিটেনের সাবেক সমস্ত উপনিবেশেও একই ব্যাপারে ঘটে। কোন কোন দেশে ব্রিটেনের আগে ঘটে, যেমন ভারত। আবার অন্যদের পরে ঘটে, যেমন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। একই সময় সর্বত্র এসব পরিবর্তন লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রও মেট্রিক পদ্ধতিতে যাবার কথা ভাবতে থাকে। মেট্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরের জন্য কংগ্রেস ১৯৭৫ সালে একটি আইনও পাস করে। গঠিত হয় মেট্রিক বোর্ড।
কিন্তু সেই আইন আর কার্যকর হয়নি, এর প্রতি বিরোধিতার কারণে। কার্যকর হতে পারেনি, কারণ মেট্রিক পদ্ধতি প্রবর্তনকে বাধ্যতামূলক না করে করা হয়েছিল স্বেচ্ছাভিত্তিক। এ ব্যাপারে জনগণের মতামতের বড় ভূমিকা ছিল। বিপুলসংখ্যক মানুষ তাপ বা ওজন পরিমাপের নতুন পদ্ধতি শিখতে চায়নি। হাইওয়েতে কিলোমিটার সাইন দেয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে গাড়ি চালকরা। আবহাওয়া পর্যবেক্ষকরা সেলসিয়াসে পূর্বাভাস পাঠের কথা শুনে ক্ষেপে যায়। ক্রেতারা কিলোগ্রামে কেনাকাটার সম্ভাবনার কথায় বিরক্ত হয়। জনগণের এমন মন-মেজাজ লক্ষ্য করে প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ১৯৮২ সালে মেট্রিক বোর্ড ভেঙ্গে দেন। কংগ্রেস যেভাবে এই আইনটি তৈরি করে, তাতে এর বাস্তবায়ন মুখ থুবড়ে পড়ে এবং আমেরিকা যে ফারেনহাইটে-ই তাপমাত্রা মাপবে, তা সুনিশ্চিত হয়। মেট্রিক পদ্ধতির বাইরে থাকার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আজ বিশ্বে কার্যত একা। শুধু বার্মা ও লাইবেরিয়া তার সঙ্গে আছে।
- Muhammod Mahdi Hasan Saikot
Wiki Link
The Sixth Sens মুভিতে একটা বাচ্চার গল্প দেখানো হয়, যার সিক্সথ সেন্স খুব ভালো কাজ করে অথবা সে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ।
এই ছেলের একটা গুরত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, সে মৃত মানুষদের হাঁটাচলা করতে দেখতে পায় এবং তারা তার কাছে সাহায্য চায়। তার ভাষ্যমতে সবাই তাদের দেখতে পায় না এবং তাদের পছন্দমত লোকেরাই তাদের দেখতে পারে।
বাসায় প্রায়শই রাতে মৃত আত্মারা তার কাছে আসতো এবং কথা বলতে চাইতো। এদের থেকে দূরে থাকতে সে নিজ বেডরুমের এক কোণায় কাপড় দিয়ে একটা তাবুর মতো বানায় এবং সেখানে শুধুমাত্র যিশুর মূর্তি রাখে। ( এ কাজটা আমিও করতাম এবং নিজেকে লুকিয়ে ভাবতাম কেউ আমাকে দেখছে না 😁)তার বিশ্বাস যিশুই শুধু তাকে ওদের হাতে থেকে রক্ষা করতে পারে। যখনি সে ভয় পায় বা অস্বাভাবিক কিছু দেখে, তখনি সে এই ছোট্ট তাবুর ভেতরে চলে আসে। এটা তার একটা আস্থার জায়গা, যেখানে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারেনা।
আমাদের প্রায় সবারি (অথবা কয়েকজনের) মনের মধ্যেও এরকম একটা স্পেশাল জায়গা আছে। বাচ্চাটার বেডরুম কে যদি আমাদের মনের জগত বলি তাহলে তার ভেতরে আরো একটি গোপন জায়গা থাকে, যাকে আমি তুলনা করছি ঐ তাবুটার সাথে। মনে অনেকের আনাগোনা থাকলেও ঐ জায়গা খুবই নির্দিষ্ট। হতে পারে একজন বা দুজন এই জায়াগায় প্রবেশের সুযোগ পায়।
কিন্তু যে এই স্থান অর্জন করে নেয়, সে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায়। শত চেষ্টাতেও তার স্থানচ্যুতি সম্ভব না। সেই মানুষ্টা হয় তার সবচেয়ে আস্থার জায়গা। যেকোনো সমস্যা বা সংশয়ে সে আগে এই মানুষ্টার কাছে ছুটে যাবে। যেকোনো কাজ এর সাথে শেয়ার করবে। সবকিছুতেই তার একটা অলিখিত ভাগ থাকবে।
এমনও হয়, মনের অগোচরে তার সাথে কথা হবে, সবসময় সে না থাকলেও মনে হবে আমার একজন আছে। তার অবস্থানকে বলে যায় মনের মণিকোঠায়!
সে জায়াগাটার দরজা সবসময় বন্ধ থাকে ।
এরকম আরো একটা দরজার কথা সম্ভবত লালন বলেছেন তার গানে। আট কুঠুরি নয় দরজা। একই নামে সমরেশ মজুমদারের একটি বইও আছে।
আট কুঠুরি মানুষের শরীরের আটটা ক্যাভিটি বা ভেসেল। মাথার খুলি, ডান-বাম দুই ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, পাকস্থলী, দুই কিডনি আর কোলন। আর এই আটটির সঙ্গে শরীরের নয়টি দ্বার যুক্ত। তিনতলা হল, মস্তিস্ক, কোমর থেকে শরীরের ঊর্ধ্বভাগ এবং নিম্নভাগ। নয় দরজা মানুষের শরীরের নয়টা এনট্রান্স বা এক্সিট - দুই চোখ, দুই নাকের ফুটো, মুখ, দুই কানের ফুটো, আর বাকি দুইটা জননাঙ্গ ও পায়ু।
মনের সেই ছোট্ট কুঠুরির মধ্যের মানুষটা যদি হারিয়ে যায়, তবুও বাকী ৮ কুঠুরি আপনাকে হয়ত বাঁচিয়ে রাখবে, কিন্তু ৯ দরজার বাইরেও যে দরজাটা আছে, সেটা বন্ধ থেকে যাবে।
Easy to enter,
Difficult to erase!
Difficult to erase!
November 11, 2018
No comments
ফেসবুক এখন প্রতি ৪টি পোস্ট পর বিজ্ঞাপন দেখায়। আগে এতটা ছিলোনা।
বাংলাদেশে যখন ফেসবুক আসে, তখন খুব কম সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করতো। আর মূল দেশের বাইরে হওয়ায় এদেশে তথা উপমহাদেশের মানুষদের নিয়ে ব্যবসা করা তাদের জন্য সহজ কাজ ছিলোনা।
এখানে ব্যবসা করতে হলে তাদের ধীর কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা করতে হত।
সেজন্য তারা নিয়ে এলো ইন্টারনেট ফর অল। ফ্রিতে ইন্টারনেট ব্রাউজিং।
এই সার্ভিস এর কারণে উপমহাদেশীয় নিজের খেয়ে পরের মোষ তাড়ানো এবং নিজের সম্পর্কে উদাসীন মানুষদের একইকাতারে নিয়ে আসা সহজ হল। ফলে ট্রেন্ড ফলো করতে বা অন্যদের সাথে কানেক্টেড থাকতে, যেকারণেই হোক সবার একটা করে ফেসবুক একাউন্ট হয়ে গেলো। এবং ব্যপারটা এমনভাবে করা হল যাতে মোটের উপর মনে হয় সবাই ফ্রি সার্ভিস পাচ্ছি এবং নিজের কাজ হয়ে যাচ্ছে। তাদের লাভ হলেও তাতে আমার কী?
অবস্থা এমন হল যে এখন ফেসবুক একাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে গেলো। ফেসবুক এখন ৬ষ্ঠ মৌলিক চাহিদা হয়ে গেলো। ভার্সিটির ক্লাস শিডিউল, কোচিং এর ক্লাস, অফিস কন্টাক্টও এখন ফেসবুক নির্ভর। একদিন ফেসবুকে না গেলে আপনার ক্লাস মিস হয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে বেশীরভাগ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করায় কোম্পানিগুলোও বাধ্য হয়ে ফেসবুক কে তাদের মার্কেট প্লেস হিসেবে নিতে শুরু করলো। বেশী ইউজার হওয়ায় এখানে বিজ্ঞাপন দেয়া বেশী লাভজনক। তাছাড়া এখানে দ্রুত পরিচিত হবার চান্সও বেশী। ফলে সবার টার্গেট ফেসবুক মার্কেটিং।
প্রথমদিকে একটি দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত এখন ফেসবুককে করেছে সবচেয়ে বড় অনলাইন প্ল্যাটফরম হিসেবে।
অন্যদেশের সাথে উপমহাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় পার্থক্য, ওরা চাইলে যেকোনো সাইটে চলে যেতে পারে, কিন্তু এখানকার মানুষ এতটাই ফেসবুক নির্ভর যে, তারা মূলত ইন্টারনেট বলতে ফেসবুক বোঝে। এবং এরা ইমেইল করতে শেখার আগে ফেসবুকে ইভটিজিং করা শেখে। যেকারণে দেখা যায় এডমিশন টাইমে ফেসবুকের গ্রুপ গুলোতে প্রশ্ন দেখা যায়- ভাইয়া আমাকে ওমুক ভার্সিটির লিংক দেন!
ফ্রিতে খাবার দিয়ে তার থেকে সবচেয়ে বড় মূনাফা আদায় করে নেয়ার সফল উদাহরণ ফেসবুক।
অন্যদেশের মানুষ যখন ডাটা চুরির পর ফেসবুক ছাড়ছে, তখন দেখবেন এদেশের মানুষ বলে আমার ডাটা দিয়ে ফেসবুক কী করবে? ঘুরাঘুরি, চেক ইন আর সেলফি আপলোড করা ছাড়া ফেসবুকে আমার কিছু নেই। এই যাদের সিকিউরিটি সেন্স, তাদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়?
ফেসবুক সহ অনলাইন কোম্পানিগুলোর মূল শক্তি ডাটা। ডাটা মানে আপনার প্রতিদিনের কাজের হিসেব। আপনি কী করেন, কখন ঘুমান, ঘুম থেকে উঠেন, কী ধরণের খাবার খান, কোথায় ঘুরতে যান, কোন সময় কীরকম ড্রেস পরেন - এসবই।
আপনার এই সামান্য ডাটাগুলো দিয়েই অনেক বড় কাজ করে ফেলা সম্ভব, তা কি ভেবেছেন?
উদ্ভাস এর উদাহরণ দিই। উদ্ভাস যখন ভর্তি নেয়, তখন আপনার কিছু ডাটা রাখে। এগুলা সবাইই রাখে। জন্মতারিখ, বাসা কোথায়, কোথায় পড়েন এসব।
প্রতিবার আপনার জন্মদিন কেউ মনে না রাখলেও উদ্ভাস আপনাকে ঠিকই শুভেচ্ছা জানাবে। ঘুমত থেকে উঠে যখন জন্মদিনের মেসেজ দেখবেন, তখন মনের অজান্তেই তাদের প্রতি একটা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ফেলবেন। এটাই ডাটার শক্তি। উদ্ভাস আপনার টাকা চায়নি। কিন্তু আপনি তাদের নাম উচ্চারণ করেছেন, এটাই তাদের অর্জন। এরপর কাউকে উদ্ভাস সম্পর্কে বলতে আপনি অবশ্যই পজিটিভ কিছু বলবেন। এটাই তাদের ব্যবসা প্রসার ঘটাবে।
আরেকটু বড় করি ব্যাপারটা। রকমারি ডট কম উদ্ভাসের প্রতিষ্ঠান। উদ্ভাসে যারা কোচিং করে তারা আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম জানে- অন্যরকম গ্রুপ, পাই ল্যাবস, টেক শহর, অন্যরকম বিজ্ঞানবক্স ইত্যাদি। এই নাম গুলো তাদের নিয়মিত শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যরা খুব বেশী জানেনা। এই যে এতগুলো ছেলে কোচিং করে, তাদের সবার কাছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন হয়ে গেলো।
এটা দেশীয় উদাহরণ।
একই কাজ করে ফেসবুক, গুগল, ইয়াহু সহ অন্যরা- যারা শুধু অনলাইনেই বিদ্যমান।
ফেসবুক আপনার ডাটাগুলো নিয়ে বিশাল ডাটাবেজ সাজিয়ে রেখেছে। সেখানে আপনার প্রতিটা ডাটা অনুযায়ী আপনাকে আলাদা ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। আর এই কাজটা যে সিস্টেম করেছে, তার নাম হল মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
সেগুলো নিয়ে পরে বলবো।
একই কাজ করে গুগল, ইয়াহু সহ অন্যরা। গুগলের মূল কাজ ছিলো সার্চ সেবা দেয়া। এতে তাদের আয় নেই। বরং তাদের আয় হল আপনি কী ধরণের জিনিষ সার্চ করেন, সে অনুযায়ী আপনার সামনে বিজ্ঞাপন হাজির করা।
গুগল সার্চের পরে আসে এডওয়ার্ড। আপনি যতগুলো ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন এবং সেগুলো যদি গুগল এডওয়ার্ডে রেজিসট্রেশন করা থাকে, তাহলে যে সাইটেই যান না কেন, গুগল তাদের বিজ্ঞাপন আপনার সামনে ঝুলিয়ে দিবে।
ফেসবুক এই কাজটা শুধু ফেসবুকে করে, কিন্তু গুগল করে পুরো ইন্টারনেট জগতে। বুঝেন অবস্থা!
অন্যদিকে উবারও আছে একইরকম কাজ নিয়ে। তাদের যেহেতু ওয়েবসাইটে কাজ নেই, তারা চেক করবে আপনার ফোন। ফোন দিয়ে আপনি কোন সাইট ভিজিট করেন, কখন কোথায় যান, যেতে কতক্ষণ লাগে এসব জানা তাদের দরকার। সে অনুয়ায়ী তারা আপনার আশে পাশে উবার এর ব্যবস্থা রাখবে।
মাইক্রোসফটের অবশ্য এসব জেনে কাজ নেই, তাদের কাজ প্রোডাক্ট বিক্রি করা। তাই প্রোডাক্ট এর আপগ্রেড এর জন্য তারা শুধু আপনার পিসির কনফিগারেশন চেক করে।
এখন জানা যাক, এসব ডাটা নেয়া আপনার জন্য কতটা ক্ষতিকর বা তাদের জন্য কতটা লাভজনক।
আপনার কাজের ডাটা নেয়া খুব একটা ক্ষতিকর বলে আমার মনে হয়না, বরং এতে আপনি সহজে সার্ভিস পাবার সুযোগ বাড়ে। কিন্তু সমস্যা হল তখনি, যখন সেই ডাটা নেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারো হাতে চলে যাবে। অর্থাৎ চুরি হবে।
চুরি হলে কী হবে?
চুরি হলে আপনার ডাটা দিয়ে অন্য কেউ আপনাকে হেনস্থা করতে পারবে সহজেই।
যেমন ধরুণ, আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি। যে রাজী হচ্ছে না। আমার ইচ্ছা তাকে তুলে আনবো। এখন আমি ফেসবুক এবং গুগলের সহায়তায় তার বিগত কয়েকদিনের ডাটা নিলাম। সে কখন কোথায় যায়, কিরকম গাড়ি ব্যবহার করে, বা ঘুরতে যায় কোথায় সে অনুযায়ী আমি প্ল্যান করে তাকে তুলে নিয়ে আসলাম। (উদাহরণ দিলাম আরকি, আমি এতটা খারাপ না !)
এবং এই কাজটা যে কেউ করতে পারে। এবং তার চিন্তা নিশ্চয় শুধু তুলে নেয়া হবেনা! সে আপনাকে কিডন্যাপ করে বড় অংক দাবী করবে। আপনার সিক্রেট বিজনেস ডিল ফাস করবে। অথবা প্রতিপক্ষের কাছে বিক্রি করে দিবে। আপনার কোনো সিক্রেট ছবি ফাস করেও আপনার ইমেজ নষ্ট করে দিবে।
এটা হল শুধু নরমাল ডাটা।
যদি আপনার ব্যাংক একাউন্টের খবর সে জানে, আপনার ক্রেডিট কার্ড নম্বর সহ অন্যান্য সব কিছুই তখন থাকবে বিপদে। ভাবতে পারেন? কতটা ভয়ানক!
আর যদি চুরি নাও হয়, তাহলে কি হবে? কোম্পানি এসব দিয়ে কী করবে?
কোম্পানি আপনার জন্য তাদের পণ্য সাজাবে। এটা আক্ষরিক অর্থে ক্ষতিকর না হলেও আপনার প্রাইভেসির জন্য খুবই ক্ষতিকর। আপনার সম্পূর্ণ চিন্তা তখন তারা চিন্তা করতে পারবে। এমন হবে যে আপনি কি করবেন না করবেন তা সম্পূর্ণ তারা নিয়ন্ত্রণ করবে। আপনা যখন যা দরকার, তার জন্য তারাই আপনাকে সাজেশন দিবে, আপনার চিন্তা শক্তিটা কাজ করার অপশন বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের পণ্যের জগতে আপনি ডুবে থাকবেন।
আর এই কাজটা করার জন্য এশিয়া হল সবচেয়ে উপযোগী জায়গা। কারণ ইউরোপে সিকিউরিটি আইন অত্যান্ত কড়া। আপনি কোন কাস্টমারের কোনো তথ্য নিতে তার জন্য যথেষ্ট কারণ দেখাতে হবে। কোনো নড়চড় হলেই জরিমানা। এবং আপনাকে ভয়াবহ শাস্তি পেতে হবে।
আগের একটা লেখায় লিখেছিলাম কেন এ আই তে চীন আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে থাকবে। কারণ চীনের মানুষের ডাটা নিয়ে ভাবনা নেই। তাই সহজেই তাদের ডাটা নিয়ে ব্যবহার করা যায়। যে কাজটা ইউরোপ এ পারবেন না। আর এ আই হল আপনার ডাটা দিয়ে আপনার জন্য কাজ করা। আপনি কখন কি করবেন না করবেন তা বের করাই হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কাজ।
এখন আসি পাঠাও প্রসঙ্গে।
পাঠাও যা করেছে তা হল, আপনার ফোনে যা আছে তার সবকিছু নেয়া। অন্যরাও এসব করে তবে তার জন্য কারণ বলে নেয়। কিন্তু পাঠাও কোনো কারণ না দেখিয়েই কাস্টমারের ডাটার উপর বেমালুম হস্তক্ষেপ চালিয়ে।
ফোনের সব কনভার্সেশন থেকে শুরু করে কন্টাক্ট লিস্ট এবং আপনার সব এপের ডাটাও তাদের কাছে আছে।
পার্থক্য অনুমতি নেয়া তে। যদিও খুব কম বাংলাদেশীই সিকিউরিটি সম্পর্কে অবগত এবং এপের টার্মস এন্ড কন্ডিশন পড়ে দেখে। তাই এসব অনুমতি চাইলেও বেশীরভাগ হ্যা করে দেয়।
এর আগে গুগল নিয়ে কথা উঠলেও তা সহজেই ধামাচাপা পড়ে যায়। কারণ আমরা এসব নিয়ে ভাবী না। তবে নতুন সাইবার সিকিউরিটি আইনে এসব নিয়ে নির্দেশনা আসছে। শাস্তির বিধান থাকছে। বাংলাদেশি কাস্টমারদের কী কী ডাটা চাওয়া যাবে তার নির্দেশনা দেয়া থাকবে।
আসলে অনলাইন জগতে কেউই নিরাপদ না। আপনার প্রতিটি ডাটা কেউ না কেউ নজরদারী করছে এবং সেভাবে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
তবে আপনি চাইলে তাদেরকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, আপনার অনলাইন জগত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।
যদি ফেসবুকের কথাই ধরি- আপনি যদি ফেসবুকে সবকিছু শেয়ার না করেন, তাহলে অনেকাংশে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারেন।
কিছু পরামর্শ-
১। নিজের আইডিতে নাম পরিচয় ছাড়া গোপন কিছু রাখবেন না। বাসার ঠিকানা, বাবা মা, সন্তান সহ অন্যদের পরিচয় আড়ালে রাখুন। শুধু যেটুকুতে আপনি মানুষ হিসেবে অস্তিত্ব আছে বোঝায় ওতটুকু।
২। জন্মদিন এবং বন্ধু তালিকা হাইড করে রাখুন। চাইলে ফেসবুক লক সিস্টেম ব্যবহার করে বন্ধু তালিকার বাইরের মানুষের কাছে আপনার পুরো প্রোফাইল হাইড করতে পারেন।
৩। ছবিগুলোতে গার্ড লক ব্যবহার করবেন। মেয়েদের ছবি ফেসবুকে খুব বেশী না দেয়াই ভালো।
৪। ফিশিং লিংক বা অপরিচিত কোনো সংবাদ লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকবেন। ইন্টারনেট সিকিউরিটি ব্যবহার করতে পারেন।
৫। ফেসবুক কে নিজেকে প্রকাশ করার পরিবর্তে শুধুমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রাখার চেষ্টা করুন। নিজের পার্সোনাল এবং সিক্রেট কোনোকিছু শেয়ার করবেন না।
এগুলো প্রাইমারি লেভেলের কাজ। এ থেকে আপনার আইডি হ্যাক হলেও রিস্ক কম থাকে। আর ডাটা কম থাকলে হ্যাক হবার রিস্ক কম।
আর ফেসবুক কাজ করে আপনার কার্যক্রম এর মাধ্যমে। আপনি যদি সবসময় ইঞ্জিনিয়ারস ডায়েরির পোস্ট লাইক দেন, তাহলে সেরকম পোস্টই সামনে আসবে, আর যদি সার্কাজম এর পোস্ট লাইক দেন, তাহলে সারাদিন ট্রল পোস্ট আপনার সামনে ঘুরতে থাকবে। আর এ ভিত্তিতেই ফেসবুকে আপনাকে বিজ্ঞাপন দেখাবে।
নিজের মতো অনলাইন জগত সাজাতে ফেসবুকে ফলো লিস্টেও শুধুমাত্র আপনার মতো মানুষদের রাখুন। আপনার ফ্রেন্ড যদি ট্রল পোস্ট এ লাইক দেয় তাহলে তা আপনার সামনেও আসবে। তাই অপছন্দের কাজ করে এরকমদের আনফলো করুন।
আজ এ পর্যন্তই। পাঠাওকে চাইলে ফোন থেকে রিসাইকেল বিনে পাঠিয়ে দিতেই পারেন। কিন্তু অন্য যারা একাজ করে তাদেরকেও পাঠাতে হবে।
এরচেয়ে ভালো হয় আনস্টল করে আবার ইন্সটল করুন এবং কন্ডিশন এ ক্লিক করার আগে অনুমতি দেয়ার বিষয় গুলোতে টিক চিহ্ন তুলে দিন।
ধন্যবাদ!
দুঘন্টা টাইপ করে আমি এখন খেতে গেলাম
Muhammod Mahdi Hasan Saikot
Civil Engineering Department
Faridpur Engineering College
November 10, 2018
No comments