এই ছেলে আর আমার মধ্যে এক্টাই মূখ্য পার্থক্য, আমি বেঁচে আছি আর ও নেই। বাকী গল্পগুলো একই রকম।
ওর জন্ম আর আমার জন্ম একই উপজেলায়, তারপর বেড়ে উঠা শেষে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় যাওয়া।
ওর বাসা আমাদের বাসা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, চৌমুহনীতে।
উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য দুজনের যাত্রাই ঢাকা। আমি সরকারি বিজ্ঞান আর ও রমিজউদ্দিন। এর পরের গল্পটাও একই হতে পারতো। হয়ত এই ছেলেটারো ইচ্ছা ছিলো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তার আর হল কই?
হাতিয়া থেকে যারা বাইরে থাকে তাদের বাসায় যাওয়া হয় বছরে দুবার। দুই ঈদে। এর বাইরে পরিক্ষার লম্বা ছুটি হলে তখন। ওর মাও বসে ছিলো ঈদে ছেলে বাসায় আসবে। আমার পরিবারো এমন। ভাইবোন অপেক্ষায় আছে কবে আমি বাসায় যাবো।
এই ছেলের দিনমজুর বাবা মারা গেছে ছোটবেলায়। তারপর চার ভাইকে মানুষ করার দায়িত্ব একা কাঁধে তুলে নিয়েছেন তার মা। থাকার ঘর নেই, একচিলতে জমি নেই, হাতে টাকা নেই। এমন পরিস্থিতি যাদের আছে অথবা যারা গ্রামে বাস করেন তারাই এর প্রকৃত রূপ চিন্তা করতে পারেন। তবে মনোয়ারা বেগম দমে যাননি। ছেলে দুটিকে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন।
সেই ছেলেটি এবার বাসায় ফিরে গেছে এক মাস আগে।
অথচ তার একটা স্বপ্ন ছিলো, সে হতে পারতো একজন দেশ গড়ার কারিগর।
এরকম স্বপ্ন আমাদের সবারই থাকে এবং প্রতিদিন ভাঙ্গে। কোটি মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গের কাছে একজন হয়তো কিছু না। কিছুদিন আগেও আন্দোলন চলছিলো কোটা সংস্কার নিয়ে। অনেকগুলো ছেলে যাদের স্বপ্ন ছিলো দেশের সেবা করবে, মেধা থাকা স্বত্বেও সিট খালী নাই সাপেক্ষে তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। তাই তারা শেষ উপায় রাস্তায় এসে দাড়িয়েছিলো। একজন মানুষ কখন রাস্তায় দাঁড়ায় তা আপনি নিজে না দাঁড়ালে বুঝতে পারবেন না। স্বাভাবিকভাবে একা সবার সামনে গিয়ে দাড়াতেও আমাদের হাটু কাঁপে, সেখানে ছেলেগুলো প্রাণের মায়া ত্যাগ করে পুলিশের মার খেয়েছে, ভাবতে পারেন?
আমাদের স্বপ্ন ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতা মানে চিন্তার স্বাধীনতা, বক্তার স্বাধীনতা। পাকিস্তান তা বন্ধ করে দিয়েছিলো। তাই আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছি । দাঁড়িয়েছি বলতে দাঁড়াতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশে সেই সুযোগটাও নেই। আপনার সরকার আপনার শত্রু। আপনি কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেই আপনাকে পেটানো হবে। আপনার কোনো স্বপ্ন থাকতে পারবেনা, কোনো চিন্তার স্বাধীনতা থাকতে পারবেনা। আপনি কিছু বলার আগে ভাবতে হবে আপনার জীবন যাবে কিনা!
আপনি কি স্বাধীন?
আমার দেশের রাস্তায় কোনো নিয়ম কানুন নেই। মন্ত্রীরা টাকা খেয়ে যাকেতাকে গাড়ির লাইসেন্স দিচ্ছে আর ড্রাইভারকে দিচ্ছে মানুষ মারার লাইসেন্স। সেখানে আপনি প্রতিবাদ জানাতে গেলে পুলিশ দিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের মারা হচ্ছে।
জীবন যাপনের জন্য চাকুরি করবো, সেখানে আমি সমান অধিকার পাবো, সেটা আমাকে রক্ত দিয়ে আদায় করতে হবে একটি স্বাধীন দেশে ?
একটা দেশের ৯০ ভাগ মানুষ যে দাবী জানাচ্ছে সেটা আদায় করতেও আমাকে রক্ত দিতে হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক দেশে মানুষ যা চাইবে তাই হতে হবে, কিন্তু এ সরকার তা করছেনা। কেন বলুনতো?
আপনি যাই বলবেন তার জন্যেই আপনাকে রক্ত দিতে হবে। এরপর বিরোধী মত বলে দমে যেতে হবে।
একটি দেশের প্রতিটি ক্ষেত্র যখন দলীয়করণ এবং ধরে ধরে দলীয় লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়, সেটা একটি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়।
এই রাষ্ট্রকে আমি গনতান্ত্রিক মনে করিনা। বরং এটি একটি স্বপ্ন মেরে ফেলা রাষ্ট্র।
প্রতিদিন অসংখ্য তরুণের সাথে আমার কথা হয়। তাদের বেশীরভাগের স্বপ্ন কিভাবে এদেশ থেকে যাওয়া যায়। অন্তত নিজের পেট চালিয়ে বাঁচা যাবে এমন একটি দেশের নাম তারা জানতে চায়।
এ দায় কার?
আপনি বলবেন একদিনে সব চেঞ্জ সম্ভব না। আমি বলবো এরকম হয়েছে কয়দিনে?
গত দুদিনে ঢাকা শহরের চেহারা বদলে গেছে। কেন গেছে? কারণ যারা করেছে তারা দলীয়করণ করেনি।
তারা জানে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল। আপনাদের মতো ক্ষমতালোভী না।
হাজার হাজার ছেলে যখন মেধা থাকা সত্বেও কোটার জন্য চাকরি বঞ্চিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটে পড়ে বয়স শেষ করে চাকুরিতে আবেদনের যোগ্যতা হারায়। দলীয় নিয়োগের শিক্ষকরা যখন পড়াতে না পেরে ছাত্রদেরও অযোগ্য করে তোলে এবং ছাত্ররা ব্যর্থ হয়, সেই দায় অবশ্যই নীতিনির্ধারক সরকারের।
গত দুমাসে ঢাকায় রক্ত জরানো জীবিত আন্দোলনকারীদের কাছে এই দুটো লাশ খুব বেশী কিছুনা, এরা মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। কিন্তু যারা বেঁচে থেকে মরছে, তাদের খুনের দায় কে নেবে???
আপনাকে চেঞ্জ আনতে হবে। আপনার নিজের মধ্যে এবং যারা আপনাকে নেতৃত্ব দেয় তাদের মধ্যে।
বুড়ো গরু হাটতে পারে, দৌড়াতে পারেনা। নাকি ভুল বললাম কিছু?
ওর জন্ম আর আমার জন্ম একই উপজেলায়, তারপর বেড়ে উঠা শেষে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় যাওয়া।
ওর বাসা আমাদের বাসা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, চৌমুহনীতে।
উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য দুজনের যাত্রাই ঢাকা। আমি সরকারি বিজ্ঞান আর ও রমিজউদ্দিন। এর পরের গল্পটাও একই হতে পারতো। হয়ত এই ছেলেটারো ইচ্ছা ছিলো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তার আর হল কই?
হাতিয়া থেকে যারা বাইরে থাকে তাদের বাসায় যাওয়া হয় বছরে দুবার। দুই ঈদে। এর বাইরে পরিক্ষার লম্বা ছুটি হলে তখন। ওর মাও বসে ছিলো ঈদে ছেলে বাসায় আসবে। আমার পরিবারো এমন। ভাইবোন অপেক্ষায় আছে কবে আমি বাসায় যাবো।
এই ছেলের দিনমজুর বাবা মারা গেছে ছোটবেলায়। তারপর চার ভাইকে মানুষ করার দায়িত্ব একা কাঁধে তুলে নিয়েছেন তার মা। থাকার ঘর নেই, একচিলতে জমি নেই, হাতে টাকা নেই। এমন পরিস্থিতি যাদের আছে অথবা যারা গ্রামে বাস করেন তারাই এর প্রকৃত রূপ চিন্তা করতে পারেন। তবে মনোয়ারা বেগম দমে যাননি। ছেলে দুটিকে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন।
সেই ছেলেটি এবার বাসায় ফিরে গেছে এক মাস আগে।
অথচ তার একটা স্বপ্ন ছিলো, সে হতে পারতো একজন দেশ গড়ার কারিগর।
এরকম স্বপ্ন আমাদের সবারই থাকে এবং প্রতিদিন ভাঙ্গে। কোটি মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গের কাছে একজন হয়তো কিছু না। কিছুদিন আগেও আন্দোলন চলছিলো কোটা সংস্কার নিয়ে। অনেকগুলো ছেলে যাদের স্বপ্ন ছিলো দেশের সেবা করবে, মেধা থাকা স্বত্বেও সিট খালী নাই সাপেক্ষে তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। তাই তারা শেষ উপায় রাস্তায় এসে দাড়িয়েছিলো। একজন মানুষ কখন রাস্তায় দাঁড়ায় তা আপনি নিজে না দাঁড়ালে বুঝতে পারবেন না। স্বাভাবিকভাবে একা সবার সামনে গিয়ে দাড়াতেও আমাদের হাটু কাঁপে, সেখানে ছেলেগুলো প্রাণের মায়া ত্যাগ করে পুলিশের মার খেয়েছে, ভাবতে পারেন?
আমাদের স্বপ্ন ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতা মানে চিন্তার স্বাধীনতা, বক্তার স্বাধীনতা। পাকিস্তান তা বন্ধ করে দিয়েছিলো। তাই আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছি । দাঁড়িয়েছি বলতে দাঁড়াতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশে সেই সুযোগটাও নেই। আপনার সরকার আপনার শত্রু। আপনি কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেই আপনাকে পেটানো হবে। আপনার কোনো স্বপ্ন থাকতে পারবেনা, কোনো চিন্তার স্বাধীনতা থাকতে পারবেনা। আপনি কিছু বলার আগে ভাবতে হবে আপনার জীবন যাবে কিনা!
আপনি কি স্বাধীন?
আমার দেশের রাস্তায় কোনো নিয়ম কানুন নেই। মন্ত্রীরা টাকা খেয়ে যাকেতাকে গাড়ির লাইসেন্স দিচ্ছে আর ড্রাইভারকে দিচ্ছে মানুষ মারার লাইসেন্স। সেখানে আপনি প্রতিবাদ জানাতে গেলে পুলিশ দিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের মারা হচ্ছে।
জীবন যাপনের জন্য চাকুরি করবো, সেখানে আমি সমান অধিকার পাবো, সেটা আমাকে রক্ত দিয়ে আদায় করতে হবে একটি স্বাধীন দেশে ?
একটা দেশের ৯০ ভাগ মানুষ যে দাবী জানাচ্ছে সেটা আদায় করতেও আমাকে রক্ত দিতে হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক দেশে মানুষ যা চাইবে তাই হতে হবে, কিন্তু এ সরকার তা করছেনা। কেন বলুনতো?
আপনি যাই বলবেন তার জন্যেই আপনাকে রক্ত দিতে হবে। এরপর বিরোধী মত বলে দমে যেতে হবে।
একটি দেশের প্রতিটি ক্ষেত্র যখন দলীয়করণ এবং ধরে ধরে দলীয় লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়, সেটা একটি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়।
এই রাষ্ট্রকে আমি গনতান্ত্রিক মনে করিনা। বরং এটি একটি স্বপ্ন মেরে ফেলা রাষ্ট্র।
প্রতিদিন অসংখ্য তরুণের সাথে আমার কথা হয়। তাদের বেশীরভাগের স্বপ্ন কিভাবে এদেশ থেকে যাওয়া যায়। অন্তত নিজের পেট চালিয়ে বাঁচা যাবে এমন একটি দেশের নাম তারা জানতে চায়।
এ দায় কার?
আপনি বলবেন একদিনে সব চেঞ্জ সম্ভব না। আমি বলবো এরকম হয়েছে কয়দিনে?
গত দুদিনে ঢাকা শহরের চেহারা বদলে গেছে। কেন গেছে? কারণ যারা করেছে তারা দলীয়করণ করেনি।
তারা জানে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল। আপনাদের মতো ক্ষমতালোভী না।
হাজার হাজার ছেলে যখন মেধা থাকা সত্বেও কোটার জন্য চাকরি বঞ্চিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটে পড়ে বয়স শেষ করে চাকুরিতে আবেদনের যোগ্যতা হারায়। দলীয় নিয়োগের শিক্ষকরা যখন পড়াতে না পেরে ছাত্রদেরও অযোগ্য করে তোলে এবং ছাত্ররা ব্যর্থ হয়, সেই দায় অবশ্যই নীতিনির্ধারক সরকারের।
গত দুমাসে ঢাকায় রক্ত জরানো জীবিত আন্দোলনকারীদের কাছে এই দুটো লাশ খুব বেশী কিছুনা, এরা মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। কিন্তু যারা বেঁচে থেকে মরছে, তাদের খুনের দায় কে নেবে???
আপনাকে চেঞ্জ আনতে হবে। আপনার নিজের মধ্যে এবং যারা আপনাকে নেতৃত্ব দেয় তাদের মধ্যে।
বুড়ো গরু হাটতে পারে, দৌড়াতে পারেনা। নাকি ভুল বললাম কিছু?