জামাল ভূঁইয়া মার্টিনেজকে দেখতে পেয়ে খুশী হলে আপনি দুঃখী কেন?
কিছু ফ্যাক্টস যা জানলে আপনি গণ আবেগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন -
১। মার্টিনেজের মূল সফর ভারতে। শতদ্রু দত্ত নামে এক ভারতীয় ক্রীড়া উদ্যোক্তা তাকে ভারত এনেছেন। এর আগে পেলে ও ম্যারাডোনার মতো মহাতারকাকে কলকাতায় এনেছেন তিনি।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা উন্মাদনা দেখে মার্টিনেজ নিজেই বাংলাদেশে একবার ঘুরে যেতে চেয়েছিলেন। তাই শতদ্রু বাংলাদেশে একটা স্পন্সর খুঁজছিলেন যারা আনবে। তবে শর্ত হলো বিমান ভাড়া ও হোটেল ভাড়া দিয়ে শুধু বাংলাদেশ ঘুরিয়ে নিয়ে যাবে। কোনো পাবলিক সেশন রাখা যাবেনা।
দেড়মাস ধরে চলা আলোচনার পর ২৬ জুন রাতে তাদের কনফার্ম করা হয় যে সে বাংলাদেশে আসবে। তবে এতে বাংলাদেশের জন্য সময় বরাদ্ধ হয় ১১ ঘন্টা। তার ভাষ্যমতে হাতে থাকা ৫ দিনের মধ্যে তারা তাদের অফিসের জন্য ১ ঘন্টা সময়ের ট্যুর প্ল্যান করে। তাদের সাথে কথা ছিলো ১০ঃ৩০ এর মধ্যে তাদেরকে মার্টিনেজকে ছেড়ে দিতে হবে।
২। ১০.৩০ এর মধ্যে নেক্সট ভেঞ্চার মার্টিনেজের সাথে কাজ শেষ করে তাকে শতদ্রুর হাত তুলে দেয়। এরপর প্রোগ্রাম প্ল্যানে ছিলো শুধু প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ। অন্য কারো সাথে দেখা করার হলে তা ১০.৩০ এর আগেই করতে হতো।
৩। বাংলাদেশ যেহেতু এ সময় সাফ খেলার কথা এবং সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী তাদের ১টার সময় বাংলাদেশে ল্যান্ড করার কথা তাই নেক্সট গ্রুপ ফুটবল দলকে অফিসে নেয়ার পরিকল্পনায় রাখেনি।
৪। বিজনেজ পারপাসে আনা সত্ত্বেও তারা ভেবেছে দু একজনকে মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে রাখা যায়। এক্ষেত্রে তারা নিজেদের কমফোর্ট জোন বা পরিচিত কাউকে রাখার কথা ভেবেছে। নেক্সট ভেঞ্চার টেক কোম্পানি হওয়ায় তারা পলককে দাওয়াত দেয়, আর আর্জেন্টিনা ভক্ত হিসেবে মাশরাফিকে। কেন সাবেক কোনো ফুটবলারকে রাখেনি তা নিয়ে কিছু বলেনি। হয়তো ব্যক্তিগত সখ্যতা নেই কারো সাথে।
তাদের কথা অনুযায়ী নেক্সট ভেঞ্চার ছেড়ে যাওয়ার পর মার্টিনেজ প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে যায়। এ ট্যুরে তার দায়িত্ব ছিলো শতদ্রুর উপর। পলকের তৎপরতায় হয়তো এই অংশটা রাখা হয়। নাহলে কোনো কূটনৈতিক ট্যুর ছাড়া একজন প্রধানমন্ত্রী অন্য দেশের ফুটবলারের সাথে দেখা করার মতো প্রটোকল বহির্ভুত কাজ করার কথা না। এসব বাংলাদেশেই হয়।
৫। এই পুরো ট্যুরটা মূলত একটা বিজনেস ট্যুর হয়েছে যেখানে কোম্পানির মার্কেটিং উদ্দেশ্য মূখ্য। মার্টিনেজকে দেখিয়ে নেক্সট গ্রুপে বিশ্বব্যাপী তাদের বিজনেস প্রচারণা চালাবে।
এই ট্যুরে পাবলিকের সামনে আনা বা সাংবাদিক পর্যন্ত নিষেধ ছিলো। পুরো সময় তাকে রাখা হয় কালো গ্লাসের আড়ালে। বোঝাই যায় কলকাতার ট্যুরে মার্টিনেজকে নিয়ে আগ্রহ ধরে রাখার জন্যই ঢাকার ট্যুরে তাকে মানুষের সামনে কিছু বলতে দেয়া হয়নি। এর দায় নেক্সটকে দেয়া যায়না, তারা শুধু মার্কেটিং সেক্টর ভেবে এদেশে নিয়ে এসেছে। আর মার্টিনেজও এই বিষয়টা জেনেই এসেছে। সে হয়তো ভেবেছিলো একবার অন্তত দেশটাতে আসতে পারছে। এরপর আর কখনো এই সুযোগও নাও হতে পারে। আর এরকম দেশগুলো থেকে স্পেশালভাবে আনলে স্বাভাবিকভাবে তখন বড় তারকাদেরকেই শুধু আনা হয়। এসব ভেবেই হয়তো সে এই ট্যুরে রাজী হয়েছে।
৬। জামাল ভূঁইয়া ও জিকো দেশে আসার পর মার্টিনেজের সাথে দেখা করতে বিমান বন্দর যায়। জামালের কথা অনুযায়ী সে মার্টিনেজকে একবার দেখতে চেয়েছে এবং দেখতে পেয়েছেও। তাই তার কোনো আক্ষেপ নেই।
জিকো বললো সে দেখা পেলে টিপস নিতো।
কিন্তু এই দুজনের আচরণ প্রফেশনাল লেভেলে খুবই অপেশাদার হয়েছে যে সেটা তাদের বোঝা উচিৎ ছিলো। তারা কোনো সাধারণ মানুষ না যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেলিব্রেটি দেখবে।
তাদের জন্য শিডিউল না থাকার পরেও তারা সাধারণ মানুষের মতো গেটে দাঁড়িয়ে ভাবতেছে একবার দেখা হলে ধন্য হবে। এর থেকে বোঝা যায়, তাদের নিজেদেরই সেলেব পার্সোনালিটি নেই।
দেখা করার শিডিউল হয়নি যেহেতু, সেখানে আবার যেতে হবে কেন! নেক্সট সিইওর ভাষ্যমতে তাদেরকে জানানো হলে, তারা হয়তো তখনো ব্যবস্থা নিতে পারতো। সেটাও করা হয়নি। বরং এই কাজ করে তারা দুজন বাংলাদেশী সমর্থকদেরকেই লজ্জায় ফেলেছে। যাদের এদেশের মানুষ ভালোবাসে, তাদের উচিৎ ছিলোনা অন্য কাউকে দেখার জন্য নিজেদেরকে সাধারণের লেভেলে নিয়ে আসা। এমনও না যে এক জীবনে আর দেখার সুযোগ হবেনা, বা একবার দেখতে না পেলে তার আত্মা অতৃপ্ত থেকে যাবে। তাদের পুরো আচরণটাই দেশের জন্যই লজ্জার হয়েছে। যারা প্রফেশনালিজম ব্যাপারে জানে, এই কথা তারাই বুঝতে পারবে।
সাধারণ মানুষ বা আর্জেনটাইন ফ্যান, সাংবাদিক কারো জন্যই এই ট্যুরে কিছু ছিলোনা এবং সেটা আগে থেকেই জানা ছিলো। তবুও মানুষ ভালোবাসার টানে গিয়েছে, যদি একবার দেখা যায়। সেটা আবেগ। কিন্তু প্রফেশনাল কাজে আবেগের কিছু নেই। এখানে থাকে শক্ত স্কেজুয়াল আর ডেটলাইন। এগুলো না বুঝলে মানুষ যুগ যুগ ধরে এপেক্সের কাস্টমার হয়েই থাকবে।
0 comments