বিএনপির বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো মানেই রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা
বৈছাআ ও সমন্বয়ক কমিটি এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে যে তারাই হাসিনাকে সরিয়ে দিয়েছে, ফলে তারা যা বলবে তাই হবে। এজন্য যখনই কোনো অযৌক্তিক কাজে আটকা পড়ে, তখনই হাসিনার মতো টেপ বাজানো শুরু করে দেয়।
এরমধ্যে দুটো প্রভাব আছে বলে মনে হচ্ছে, কিছুটা এক্স ছাত্রলীগের যারা এতে যোগ দিয়েছিলো, আরেকটা হলো যোগ দেয়নি এমন জাশিদের ইনফ্লুয়েন্স।
এই ইম্পেক্টের পেছনের কারণ, প্রথমত যেকোনোভাবে ৭১কে বাতিল করে দেয়া যে ওটা মূলত ভারতীয় আদিপত্যবাদ স্থাপনের জন্য পাকিস্তানের বিভাজনের ষড়যন্ত্র ছিলো - যেটা শিবির প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, দ্বিতীয়টা লীগ মানসিকতার লোক, যারা যেকোনোভাবে ভারত বিরোধীতার প্রকাশ্য বক্তব্য বিএনপিকে দিয়ে বলিয়ে নিতে চায়, যাতে ইনভার্স ইম্পেক্টরূপে ঠিক এটাই প্রতিষ্ঠা করতে পারে যে, লীগ ছাড়া সব দল ভারতের জন্য হুমকি, এবং এই পয়েন্ট ধরে ভারত এখানে উৎপাত করবে।
কিন্তু এখানে কূটনীতিক ইস্যু হলো, সরকার যেই গঠন করুক, তাকে এই আশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে, তার হাতে প্রতিবেশীরা সেফ। ন্যায্য অধিকারের আলাপটা দেশের ভেতরের বন্দোবস্তের বিষয়। মানে প্রতিবেশীর সাথে কী নিয়ে ডিল হবে, সেটা ভেতরের রাজনীতি, কিন্তু বাইরে এটা বোঝাতে হবে যে, আমরা আপনাদের জন্য নিরাপদ।
একইভাবে বৈছাআ এবং জানাক - আন্দলোনের সময় আমাদের দেয়া সেই ভাইব নিয়ে এখনো আছে যে, এই আন্দোলন পুরোটা ছাত্ররা করে ফেলেছে। অথচ তারা এটা ভুলে যাচ্ছে যে, সেসময় সব দলের মানুষ তাদের আমন্ত্রণে বা আমন্ত্রনের আগেই রাস্তায় ছিলো। শুধুমাত্র হাসিনার ক্রাকডাউনের নৈতিক অবস্থান নষ্ট করতে সব দল বারবার এটা বলেছিলো, যে এটা শুধুমাত্র ছাত্রদের আন্দোলন।
বাস্তবতা না বোঝা, আর না বোঝার ভান করা ভিন্ন হলেও, দুটার ফল একই হবে।
ছাত্র নেতারা এখন সেই ভুলের দিকেই আগাচ্ছে।
তারা কথাই কথাই বিএনপিকে শত্রু বানিয়ে নিজেরা বড় প্রমাণ করতে চাচ্ছে। বড় হলে সমস্যা ছিলো না, কিন্তু সমস্যা হলো- যা না, তা ভেবে থাকা।
কোনো রাজনৈতিক দল ছাড়া দেশের ব্যবসা ও রাজনৈতিক স্থিতি আনতে পারবেনা। এজন্য একটা নির্বাচনিক সরকার গঠন করা লাগবেই।
যেকারণে ছাত্রদের উচিৎ ছিলো বিএনপিকে মুরুব্বি ধরে নিয়ে তাদেরকে এই আশ্বাস দেয়া যে আপনারা নিশ্চিন্তেই ক্ষমতা পাবেন, কিন্তু তার আগে আমাদের এই এই দাবীগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। সেখানে তারা সব সংস্কারের দাবী রাখতে পারতো এবং এরকম আশ্বাসের জন্য বিএনপিও অনিশ্চয়তায় না ভুগে তাদের দাবী অনুযায়ী নেগোসিয়েশন এ যেতো।
এই পরিস্থিতি না বোঝাটাই হলো রাজনৈতিক অযোগ্যতা।
আমার ধারণা ছাত্রদের মধ্যে এরকম ভাইবটা তৈরি করেছে জাসির অতিপাকনা লোকজন। যারা অনলাইনে কিছু ফ্যান দেখে নিজেদের রাজা ভেবে নেয়।
বাস্তবতা হলো, ভোটের রাজনীতি করে সরকারে জায়গা পেতে ছাত্রদের দলের আরো অনেক সময় লাগবে। আর জাসি কখনোই একক নির্বাচন করে ১০ আসন পাওয়ার যোগ্যতাও রাখেনা।
এই বাস্তবতায় ছাত্ররা যতবেশি বিএনপির বিরুদ্ধে উৎপাত করতে চাইবে, পরিস্থিতি ততই তাদের বিরুদ্ধে যাবে।
গতকাল নাহিদের দোষারোপের পোস্টের সমান্তরালে সব সমন্বয়কের রক্ত গরম করা কথাবার্তার পর আজকে আসিফ ঠিকই ঐক্যের কথা বলছে।
সরকার গঠনের পরেই যে ভবিষ্যতবানী করেছিলাম - ছাত্রদের সরকারের অংশ হওয়া উচিৎ হয়নি, যতদিন যাবে তাদের জনপ্রিয়তা কমতে থাকবে, বিএনপি মুখে নির্বাচন চাইলেও সময় দিবে- সবই ফলে গেছে।
রাজনীতি, কূটনীতি, এগুলো দু চারটা মানুষ জড়ো করে হাততালি নিলেই হওয়ার জিনিস না।
বিএনপি কেন জাতীয় সরকার করেনি?
এই প্রশ্নের আমার কাছে দুইটা সম্ভাব্য উত্তর আছে। নৈতিক ও আইডিওলজিক্যাল।
জনগণের ভোট ছাড়া একটা রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করেছে, এরকম একটা কলংক তাদের সাথে লেগে যাওয়ার সুযোগ ছিলো, যেই নৈতিক অবস্থান থেকে তারা এরকম সুযোগ থেকে বিরত থেকেছে।
আইডিওলজিক্যাল বিষয়টাও একইরকম। জনগণের জন্য গঠিত দল, তাদের মতামত ছাড়া তাদের শাসন করার দায়িত্ব নিবেনা।
তাদের চিন্তা অনুযায়ী, তারা নির্বাচন করে জাতীয় সরকার করে তারপর প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে।
এতে ছাত্রদের সমস্যা হলো, এভাবে করলে সংবিধান বাতিল হবেনা।
এর সমাধান হিসেবে তারা গণপরিষদের ভোটের দাবি নিয়ে নেগোসিয়েশন করতে পারতো। তা না করে কেউ সরকারের অংশ হয়ে, কেউ বাইরে থেকে রাজনৈতিক আলাপ করে যাচ্ছে।
তোমরা সরকার থেকে সরে আসো৷ এরপর আবার রাস্তায় নেতৃত্ব দাও। যে দাবী, রূপরেখা দেয়ার জন্য ৫ আগস্ট সরকার গঠন করলে না, রাষ্ট্রপতির বাড়ি গেলেনা, সেটাতো এখনো পূরণ করতে পারলে না। তাহলে আবার শুরু করো।
এই পদ্ধতিতে না গিয়ে হুট হাট চিল্লাচিল্লি করে তোমরা কিছুই করতে পারবে না।
নাহিদের ভুল বক্তব্য ঢাকতে, যারা তার ১ দফা ঘোষণা, পায়ের ছবি দেখাও, তোমাদের বাচ্চামো মানসিকতা ছাড়াতে হবে। নাহিদ না বলে অন্য কেউ ১ দফা বললে, বা কেউ না বললেও সেটা কোনো পার্থক্য তৈরি করতো না৷ কারণ যারা ১৭ তারিখের পর রাস্তায় ছিলো, সবাই হাসিনাকে নামানোর জন্যই ছিলো।
হাসিনাকে সরানোর ১ দফা আরো আগেই ফেসবুকে ঘোষণা হয়ে গেছে। অল্প দিনেই সব খেয়ে ফেললে তো হবেনা।
তাই, উপদেশ হলো, রাজনৈতিক জ্ঞান বাড়াও। আশেপাশে সবার কথা শুনতে হবে।
কিন্তু সবদিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সব দলের সমর্থনেই এই সরকার এসেছে। বিএনপির সবাই শুরু থেকেই বারবার সমর্থন দিয়ে এসেছে। তাই তাদেরকে আস্থার মধ্যে না রেখে শত্রু বানালে, তোমাদের মেয়াদ কমা ছাড়া ভিন্ন ফল নেই।
আরেকটা কথা হয়তো ভুলে যাও, এই সরকার যা কিছুই করুক না কেন, সেটা একটা নির্বাচিত সরকার এসে বৈধতা দিতে হবে।
ফলে যত হাতিঘোড়া মারা হোক না কেন, নির্বাচনে যদি বিএনপি জেতে আর তোমরা তাদের মতামত ছাড়া সংস্কার করো, সেটাও কিন্তু কোনো ফল আনবেনা৷
এগুলো সবই বাস্তবতা।
এখন বিএনপিকে এই আস্থায় রাখতে হবে যে, আপনারা নির্বাচনের পরে সরকারে আসবেন। কিন্তু আমাদের এই দাবি গুলো মানতে হবে। এভাবেই সবার ঐক্য সম্ভব।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা, জামাত যার সাথে থাকবে, তার পতন জামাত নিজেও ঠেকাতে পারবেনা।
0 comments