Notes on Yunus-Modi Meeting
১। ইউনুসের সাথে বৈঠক করার মাধ্যমে ভারত হাসিনার পতন স্বীকার করে নিলো। এর আগে তারা নানাভাবে চেষ্টা করে গেছে হাসিনাকে আবার বসাতে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছিলো, কিন্তু ভারত তাদের প্রদেশ পতন মানতে পারছিলোনা কোনোভাবেই, অথচ চীন হাসিনা যাওয়ার এক সপ্তাহ পরেই সব দলের সাথে মিটিং করে হাসিনাকে হজম করে ফেলেছিলো। এমনকি বেশকিছু তরুণদের চীনে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গেলো, মেডিকেল ট্যুরিস্ট নিলো।
অন্যদিকে ভারতকে সমঝোতায় আনতে বাংলাদেশ তাদের দুই শত্রু পাকিস্তান ও চীনের সাথে সম্পর্ক দ্রুত উন্নয়ন ঘটালো, এমনকি চীনে বসে নিজেকে ৭ বোনের গার্ডিয়ান হিসেবেও ঘোষণা করলো।
ফলে বাধ্য হয়েই এক প্রকার "এই লোকটাকে থামাতে" মোদী মিটিং এ রাজি হয়েছে। ফলে এটা আমাদের কূটনৈতিক বিজয় এবং ভারতের চোখে হাসিনার পতন হিসেবে প্রতিষ্ঠা হলো।
২। আলোচনার টেবিলে রেগুলার আলাপই এসেছে। পরের মিটিং এ হয়তো বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার বিষয়গুলো আদায়ের জন্য মূল দেনদরবার হবে। ভারতের কাছে আমাদের মূল পাওনা পানি৷ গঙ্গা চুক্তি ২৬ এ শেষ হবে, তিস্তা চুক্তি এখনো হয়নি, ফেনি নদীর পানি বন্টন এবং শিলিগুড়ি করিডোর ব্যবহার বিষয়গুলো মূল আলোচ্য বিষয় হবে। এছাড়া মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার নিয়ে আগের চুক্তি নিরাপত্তা ইস্যুতে পুনর্মূল্যায়ন হওয়া উচিৎ।
৩। মোদির ইন্টারপ্রেটার ব্যবহার নিয়ে হাসাহাসি বা তার আগে থেকে এসে বসে থাকা - জিনিসগুলো নিয়ে ট্রল দৃষ্টিকটু। এর আগে আমরা আসিফ ও নাহিদকেও ইন্টারপ্রেটার ব্যবহার করতে দেখেছি। এমন না যে সে ইংরেজি জানেনা বা ইংরেজিতে কথা বলতে পারেনা। তবে, আলোচনার সময় বাড়তি সময় পাওয়ার জন্য অনেকেই ইন্টারপ্রেটার ব্যবহার করে, এটাও একটা কুটনৈতিক কৌশল। এছাড়া তাকে চাওয়ালা বলে ডাকাটাও অভদ্রতা। তার উপযুক্ত উপাধি হতে পারে গুজরাটের কসাই। তবে টুইটারে ইংরেজিতে এসব নিয়ে পোস্ট করা যেতে পারে ভারতীয় মিডিয়ার কাউন্টার হিসেবে। রাজনৈতিক বিবাদে ব্যক্তিগত দুর্বলতা আলোচনা করাটা অসভ্যতা।
৪। ভারতকে শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করা আমাদের জন্য লাভজনক না। বরং তাদেরকে আমাদের উপর নির্ভরশীল হিসেবে ট্রিট করে নিজেদের স্বার্থ আদায় করতে হবে। যারা রাজনীতির খবর রাখেন, তাদের কথাবার্তায় সংযমি হওয়া উচিৎ, অন্যরা কোন কথা শুনে খুশী হবে, সেগুলো ভেবে নিজের মত দিলে নিজস্বতা বলতে কিছু থাকবেনা।
৫। অন্য সব দেশের সাথে বৈঠকে ইউনুস অভ্যুত্থানের চিত্র বা বই দিলেও মোদিকে দিয়েছেন ১০ বছর আগে তোলা একটা যৌথ ছবি। অন্য দেশকে বাংলাদেশের মানুষের কৃতিত্ব জানান দেয়ার চেষ্টা ছিলো, তবে ভারতের ক্ষেত্রে তিনি কৃতিত্বের চেয়ে নিজেদের বন্ধুত্বটা প্রধান হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, বোঝাতে চেয়েছেন যে, দেখো, আমি তোমাদের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলাম, তোমাদের শত্রু নই। আমাদেরকে বন্ধু হিসেবে দেখলে তোমাদের ক্ষতি নেই।
৬। হাসিনা এখন ভারতের গলার কাঁটা। হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত এখন বিশ্বের চোখে বাংলাদেশের কাছে নিঁচু অবস্থানে আছে। ভারতের কোনো বিষয়ে আমরা সাধারণত কথা বলিনা, কিন্তু হাসিনা থাকায় আমরা বারবার খবরদারি করতে পারি যে, ওই মহিলাকে চুপ থাকতে বলুন। এটা অনেক অপমানজনক কথা, যেটা হাসিনা না থাকলে তাদের শুনতে হতো না। নিজেদের আত্মসম্মানবোধ থাকলে মোদি নিশ্চয় সেটা উপলব্ধি করে ফেলবেন আজকেই।
0 comments