পপুলিস্ট রাজনীতির অদূরদর্শী ন্যারেটিভ বিল্ডিংঃ দেশের কী লাভ?
আমার পর্যবেক্ষণে বিএনপি দলীয়ভাবে ঠিক পথেই আছে, তারা কোনো পপুলিস্ট রাজনীতি এন্ডোর্স করেনি।
রাজনীতির মূল উপাদান হলো, সিদ্ধান্তগুলো আসবে ভবিষ্যৎ চিন্তা করে, কারণ প্রতিটা সিদ্ধান্ত একেকটা রেফারেন্স হয়ে থাকবে। কোনোকিছু এসময় ঠিক মনে হলেও, ১০ বছর পর সেটার জন্যেই ব্যাকফুটে চলে যেতে হতে পারে।
বড় দলগুলোকে এজন্য সবসময় একটা ঝুঁকিতে থাকতে হয় যে, কখন ভুল করে বসে। বিএনপি মধ্যপন্থী দল হওয়ায়, তাদের ক্ষেত্রে ইমেজের চিন্তাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বড় দলগুলোকে নিজেদের আদর্শগত অবস্থান সবার আগে ধরে রাখা লাগে।
সেজন্যই, পপুলিস্ট দাবিগুলো তাদের এড়িয়ে যাওয়া ভালো। এগুলো পিক করবে ছোটদল। তাতে তারা সবসময় আলোচনা টেবিলে থাকবে, পরিচিত বাড়বে।
যদি কখনো ভুলও হয়, তখন ছোটদল হিসেবে ছাড় পেয়ে যাবে, যেটা বড়দল পাবেনা।
আবার দু-একটা দাবী যদি আদায় করে নিতে পারে, তাহলে সেটাকেও বড় করে উদযাপনের সুযোগ থাকে।
এখন একটা শর্ট রিভিউ যদি করি, ৫ আগস্ট পর্যন্ত পপুলিস্ট রাজনীতির সবগুলো অপশন থেকেই বাজাদ বিরত থেকেছে, অন্যদিকে নাপা এই ইস্যুতেই তাদের বিরুদ্ধে লেগেছে। বেশ কিছু ঘটনায় নাপা ইস্যু তৈরি করে বিএনপিকে প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য উষ্কেছে, যেগুলো আগে থেকেই জানা যে, বিএনপি রাজি হবেনা। তবে এতে বিএনপির রিএকশন দেখানোটাই হলো ভুল রাজনীতি, কিংবা নাপার জন্য জয়, কারণ তাদের এখন শক্তি বোঝানোর সময়, বড় দলের এটেনশন নেয়ার সময়, এতে কেউ গুরুত্ব দিলেই সেটা অর্জন ধরে নেয়া যায়।
সব রাজনৈতিক দল মিলে সরকার গঠনের প্রস্তাব - বিএনপির না। কারণ রাজনৈতিক দল চলে ভোটের জন্য, ভোটে জয়ী হয়ে নির্বাচিত হওয়া ছাড়া ক্ষমতা নেয়াটা নিজেদের নীতিবিরুদ্ধ। তারা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সব বিজয়ী দল নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয় এবং এখনো সেই পথেই আছে৷ এটা করলেই বরং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন হয়।
রাষ্ট্রপতি অপসারণ - বিএনপির না। কারণ প্রথম ধাক্কাতেই না সরানোর ফলে এটা এখন অপ্রাসঙ্গিক। প্রথমে সরানো হয়নি, তখন রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে এই সরকারের বৈধতা, তথা অন্তরবর্তীকালীন সরকার নেয়া হয়। এখন সংসদ নেই, স্পিকার নেই। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সংসদ নেই, আবার অস্থায়ী দায়িত্বের জন্য স্পিকার নেই৷ ফলে নতুন রাষ্ট্রপতি কে হবে, সেটা নিয়েই অনেক জল ঘোলা হতো, যেটা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হিসেবে অপ্রয়োজনীয়।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ - বিএনপি এটা লীগ সরকারের জামাত নিষিদ্ধের মতো করতে না বলেছে। ২য়ত একটা রাজনৈতিক দল আরেকটা দলের নিষিদ্ধ করতে বলাটা অনৈতিক। এটা করার জন্য হয়, তাদের সব সদস্যের অপরাধের বিচার করে আদালত কর্তৃক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে করবে, অথবা গণভোট আয়োজন করে করবে। নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলে সেটা মাইনাস ফর্মুলা হিসেবে দেখা হবে।
এরপর এখন চলছে সেনাবাহিনী প্রধান বিরোধী আলোচনা। এটাও একটা ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যেখানে আর্মির মনোবল ভেঙে যাওয়া ও অন্যান্য দাপ্তরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মোটের উপর বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ইস্যু, যা গণতান্ত্রিক সরকারও করতে চাইবেনা।
এরবাইরে ধর্ষণের বিচার ইস্যু, যেটা হঠাৎ করে গভীর রাতে মিছিল করে তৈরি করা, এরপর লাগাতার বিভিন্ন নিউজ সামনে এনে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বানানো, এগুলো সবই পপুলিস্ট রাজনীতির উপাদান, যেগুলো দিয়ে খুব সহজেই মানুষের নজর কাড়া যায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে অপ্রয়োজনীয় বিষয়।
সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করে তৈরি করা ইস্যু নিয়ে বিএনপি কিছুটা রিএকশন দেখিয়েছে লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে তাদের অবস্থান পুণরায় উপস্থাপন করেছে।
তাদের সিনিয়র নেতাদের বোঝা উচিৎ, এসব ইস্যু বানানো হয় রিএকশন বের করে দু একটা শব্দ মুখ দিয়ে বলিয়ে নেয়ার জন্য, যাতে তাদের বিরুদ্ধে একটা কাল্পনিক ন্যারেটিভ তৈরি করা যায়।
যেমন- লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে রিজভী, আসিফ, নাহিদ, হাসনাত, মাহফুজ একই সূরে কথা বলেছে। এদের বিচার করতে হবে, বিচার পর্যন্ত রাজনীতি বন্ধ থাকবে, যারা দোষ করেনি, তারা আবার রাজনীতি করতে পারবে। কিন্তু সবসময় রিজভীকে টার্গেট করে মিডিয়া ক্যাম্পেইন করা হচ্ছে, এবং বিএনপি লীগের পুনর্বাসন চায় হিসেবে ন্যারেটিভ দাঁড় করাচ্ছে, যাতে মানুষকে বোঝাতে পারে লীগ আর বিএনপি একই। এদেরকেও বিদায় করতে হবে, কিংবা নৌকা আর ধানের একই বিষ।
আবার দেখবেন, যখনই নাপা কোনো ইস্যুতে ব্যাকফুটে চলে যায়, তখন সারোয়ার তুষার মিডিয়াতে এসে বারবার রাষ্ট্রপতি সরানো, জাতীয় সরকার গঠনের ইস্যু এনে বিএনপি ব্যাশিং করে। যেন এগুলো মেনে নিলেই সব ঠিক হয়ে যেতো। এরকম ইস্যু তৈরি করে বিএনপিকে রিএকশন দেয়ার জন্য উষ্কে দেয়াটাই মূলত এখন তাদের রাজনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি বিএনপি এগুলোতে রিএকশন দেয়া বন্ধ করে শুধু নিজেদের কথা বলে যায়, তাহলেই তাদের রাজনীতি অর্ধেক শেষ হয়ে যায়।
মুলত, বিএনপির নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্যে দেয়া জুলাই, সংস্কার, নির্বাচন নিয়ে দেয়া সবগুলো বক্তব্যই আগের কিছু ঘটনার রিএকশন। এর আগে ইস্যু তৈরি করে এমন সব পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে, যাতে মুখ দিয়ে পছন্দমতো কথা বের করে তা দিয়ে দলীয় দোষ দেয়া যায়।
এসব বিষয়ে এখনো তারেকের বক্তব্যকেই মূল দলীয় অবস্থা বিবেচনা করছি, যিনি কোনো রিএক্টিভ রিএকশন দেখাচ্ছেন না, বরং সতর্ক করে যাচ্ছেন। লন্ডনে থেকে ঠিকই বুঝতে পারছেন, পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে, যেটা মানুষদের আশেপাশে থাকা নেতারাও ধরতে পারছেন না।
তবে এসব ইস্যুতে সবচেয়ে স্মার্ট ডিসিশনটাও তারেক রহমানের। ইন্টেনশনাল কিংবা না, তিনি বিড়াল হাতে একটা ছবি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এসব ইস্যুকে পাত্তা দেয়া যাবে না, যেরকমটা তিনি ও কোকো করেছেন লীগের দেয়া হরতালের মধ্যে কলাবাগান ক্রিকেট খেলতে গিয়ে।
নাপার সৌজন্যে জাশির কর্মীরা একেরপর এক ইস্যু তৈরি করে যাচ্ছে, যেগুলোর ফার্স্ট ইম্প্রেশনটাই হচ্ছে বাজাদ = লীগ।
যেকোনো ঘটনার ভেতরে চেক না করে প্রথমে তাদের অনলাইন এক্টিভিস্টদের মাধ্যমে বাজাদের সংশ্লিষ্টতা সামনে এনে সমানে পোস্ট করা হবে, যাতে ফার্স্ট ওয়েভটাই সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। এদেশের মানুষও এমন যে, তারা প্রথম দেখা পোস্টই বিশ্বাস করে, পরে এই ঘটনার ফলো আপ কী হচ্ছে, তা আর খোঁজ রাখেনা। ফলে একেরপর এক যখন একইরকম পোস্ট দেখতে থাকে, তখন একটা বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব তৈরি হয়ে যায়। আর এটাই হলো ন্যারেটিভ তৈরির লক্ষ্য।
আমরা যারা দীর্ঘদিন অনলাইন ইস্যু নিয়ে কাজ করি, তারা এসবের সাথে পরিচিত। আগে একই কাজগুলো লীগ করতো, যাতে সরাসরি সব দোষ দেয়া হতো বিএনপি+ জামাতকে। কিন্তু অধিকতর বিশ্লেষণে দেখা যেতো, সব তাদের সাজানো।
এমনকি উন্নয়নের যত গল্প তারা প্রচার করেছে, সার্ফেস ইনফরমেশন এক্সেস থাকা মানুষদের বেশীরভাগই সেগুলোকে এখনো বিশ্বাস করে।
আপনি কোথাও আড্ডা দিতে গেলে অবাক হয়ে যাবেন, এরা কোন দুনিয়ায় থাকে। লীগের টার্গেট এরাই ছিলো, এবং তারা তাদেরকে ম্যানিপুলেট করতে পেরেছে।
এখনো একইভাবে চলছে। আপনি এখন সবাইকে নির্বাচনের বিরুদ্ধে যেতে দেখবেন, ইউনুসকে আজীবন ক্ষমতায় রাখতে চাইতে দেখবেন, এবং তাদের এই মনোভাব তৈরির পেছনেই কাজ করছে এই pseudo issue গুলো। এক্ষেত্রে টার্গেট যেকোনোভাবে রাজনৈতিক সরকার না আনা। কারণ নির্বাচন করার মাধ্যমে আসতে গেলে জামাত + শিবির, নাপা সরকারে আসার সুযোগ কমে যাবে, এখন তারা কোনো বড় পরীক্ষার মুখোমুখি না হয়েই যে সুবিধা গুলো ভোগ করছে, সেগুলো নেয়ার সুযোগ হবেনা। এছাড়া নিজেদেরকে শক্তিশালী, মানুষ আমাদেরকে চায়, এসব প্রচার করে নিজেদের কাল্পনিক স্টেক বাড়ানোর চেষ্টা উল্লেখযোগ্য।
আরেকটু গভীরে গেলে, তারা ৫ আগস্ট পরবর্তী পিপলস উইলের আলাপ বারবার তুললেও, এখন মূলত সেই পিপলস উইলকেই অস্বীকার করছে।
ভোট দিলে বিএনপি জিতে যাবে, হাসিনার সেই পুরনো আলাপই আবার সামনে এনে এটা প্রমাণ করছে, ভোটের মাধ্যমে বাজাদ যদি জেতে, তাহলে তো মানুষ বাজাদকেই চাচ্ছে। তাহলে আপনারা পিপলস উইলকে অস্বীকার করে হাসিনার মতো ঠেকানোর চেষ্টা করছেন কেন?
হতে পারে নাহিদ জাশির ফাঁদে পড়েছে, কিংবা তারাই সেটা চাচ্ছে।
কারণ, ঐতিহাসিকভাবে জামাত অন্যের উপর ভর করে তাদের নিজস্ব রাজনীতি নষ্ট করার দল।
এখনো তারা বাংলাদেশ পন্থার বিপক্ষে যেয়ে নিজেদের ক্ষমতার আকাঙ্খা পূরণ করছে, যাতে নাপাও লাভ পাচ্ছে। তাদের দল দাঁড়ানোর ফান্ড ও সময় পাচ্ছে। সরকারের আশ্রয় পাচ্ছে।
তারা ভাবছে, বাজাদকে ঠেকাতে পারলেই তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে। তাদের বিরুদ্ধে জনমনে বিদ্বেষ ছড়ালেই মানুষ নিজেদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলবেনা।
এটা সাময়িকভাবে দেখতে সুন্দর।
কিন্ত, দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য খুবই খারাপ সময় নিয়ে আসবে। দুঃখের বিষয় হলো, জামাত + নাপা সেটা কখনো বুঝবেনা। আর এর সব দায় দিবে বাজাদের উপর। যেরকমভাবে এখন সরকারে থেকেও চাঁদাবাজি + আইন শৃঙ্খলার অবনতির দায় দিয়ে যাচ্ছে।
এই সময়টা ক্রিমপাই বলা যায়, সবাই অনেক প্রতিশ্রুতি দিবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো রাজনৈতিক সরকার আসা ছাড়া বিদেশি ইনভেস্টমেন্ট আসবেনা, দেশের ব্যবসার প্রসার হবেনা।
জনপ্রতিনিধির যে শক্তিমত্তা থাকতো, বিভিন্ন দপ্তর দায়িত্বপ্রাপ্তদের সেটা না থাকায়, তারা আমলাদের সাথে নেগোসিয়েশন এ যাবে, ফলে ভাগেযোগে লুটের সুযোগ বাড়বে, যেটা লীগের সময়ে ছিলো।
জনগণের ম্যান্ডেট না থাকলে, লীগের সময় আর এখনকার পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন আসবেনা। সহজ কথা হলো- উন্নয়ন তো লীগই সবচেয়ে বেশি করেছিলো, তাই না?
সংস্কার ইস্যু এনেও একটা প্রপাগাণ্ডা চালানো হবে যে, বিএনপি কোনো সংস্কার চায়না। ন্যারেটিভ এমন যে, যতগুলো সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সবগুলো মেনে নেয়াটাই সংস্কারের পক্ষে থাকা। যৌক্তিকতা বা বাস্তবায়নযোগ্যতা বিচারের দরকার নেই।
এগুলো সবগুলো এমনভাবে তৈরি করা, যাতে আপনি মেনে নিলেও বিপদ, এখন মেনে না নিলে বলা হবে, সংস্কার চান না, এখন মেনে নিয়ে পরে বাস্তবায়নের সময় বাতিল করলে বলা হবে সংস্কারের সাথে প্রতারণা।
কারণ, যারা এসব বলে, তাদের সরকার চালানোর অভিজ্ঞতা নেই, কখনো হবে বলেও মনে হয় না।
এক্টিভিজম আর সবার চাহিদা পূরণ এক জিনিষ না।
মূলত, সব সমস্যার সমাধান হয় যখন মানুষের কাছে দায়বদ্ধতা থাকে, আর প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা তৈরি হয়।
নাহলে, এসব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সবসময় পরিবর্তনীয়। দেশের মানুষের আচরণ কেমন, তার ভিত্তিতেই তাদের প্রতিনিধির আচরণ তৈরি হয়।
তাদের কন্ট্রোল যারা করবে, আমাদের প্রয়োজন তাদের শক্তিশালী করণ।
সংস্কার করেও লাভ হবেনা, যদিনা তাদেরকে জবাবদিহিতে না রাখা যায়।
আবার, আপনি রাজনৈতিক দলকে ঠেকিয়ে যত সংস্কারই করেন, সেগুলো কিন্তু আইনে রূপান্তর করা যাবে না, তারা যদি সংসদে পাশ না করে।
এগুলো সিম্পল রাজনীতি।
ফলে বিএনপি মাইনাস করার এই ষড়যন্ত্র সবসময় নাপার জন্য বিপদজনক হবে। বিএনপির আচরণ এখনো সহনশীল, যদি তারা শত্রুতা এবং মিথ্যার পথে হাঁটতে থাকে, তাহলে তারা কখনো রাজনৈতিক ঐক্যের দিকে যেতে পারবেনা।
বিএনপি ব্যাশিং বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভালো কিছু আনবেনা।
1 comments
Good Analysis vhai
ReplyDelete