স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা করতে গেলে আমাদের মানবাধিকার ও স্বাধীনতা শব্দগুলোর অর্থ ভালোভাবে বুঝতে হবে।
মানবাধিকারের প্রথম শর্ত হলো কোনো মানুষ অন্য কাউকে "ফিজিক্যালি হার্ম" করতে পারবেনা।
কেউই অন্য কাউকে শারিরীক আঘাত করতে পারবেনা। হত্যা তো আরো অনেক দূরের আলাপ।
স্বাধীনতার প্রথম শর্ত হলো চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। কেউ একজন বলেছিল, আমি তোমার মতের সাথে একমত না হতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের অধিকারের জন্য জীবন দিতে পারি।
অর্থনীতির কি অবস্থা, কত টাকা পকেটে আছে এগুলো কখনওই স্বাধীনতার নির্দেশক না। ক্রিতদাসেরও টাকা থাকে, কিন্তু সে স্বাধীনতার স্বাদ পায়না।
উন্নয়নের উদাহরণ দিয়ে স্বাধীনতাকে তুলনা করতে গেলে আমরা এখনো ব্রিটিশদের অধীনে থাকতাম। কারণ তারাইতো এ অঞ্চলে প্রথম পশ্চিমা আবহের নির্মাণ কাজ করেছিলো। রেল বসিয়েছে। অট্টালিকা বানিয়েছে। তখনো কিছু মানুষ বলেছে - এই রাণীর অধীনে না থাকলে এত উন্নয়ন করতো কে? ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিকল্প দেখাও?
তখনো কিছু মানুষ এখনকার মতো ভিন্ন ভুখন্ডের দালাল অভিহিত হয়ে লড়েছিল। তাদেরও হয়ত বলেছিল, এরা পর্তুগালের দালাল 🥱
কিন্তু নিজেদের স্বাধীনতার অধিকার সবসবময় চলেছে।
ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার সময়ে নিশ্চয় অনেকে ভেবেছিল এবার বুঝি মুক্তি এলো। আমাদের নিজেদের সরকার আছে এখন।
কিন্তু তাও হলো কই?
আবারো সেই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন হয়েছে।
অধিকার ব্যাপারটাই এমন, এটা যতদিন প্রতিষ্ঠা হবেনা ততদিন লড়ে যেতে হয়। স্বাধীন হয়ে গেলেও এর পাওয়া হয়না।
৭১ এ স্বাধীনতা অর্জনের পরেও তখনকার মানুষ তো ভেবেছিল, এবার বুঝি স্বাধীনতা পেলাম।
কিন্তু ৭২ থেকেই তো আবার অন্য লড়াই শুরু হলো। পারিবারিক আর এক দলীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তখনো প্রতিবাদ আর লড়াই করে যেতে হয়েছে। রাস্তায় মরতে হয়েছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত স্বাধীনতা আসবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রের উপর নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবেনা, নিস্তার নেই বন্ধু! এ লড়াই চালাতেই হবে।
আমাদের ট্যাক্সের টাকায় চলা রাষ্ট্রে কে প্রধান হবেন, কে বিদায় হবেন তার সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে থাকতে হবে।
কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের মতের বিরুদ্ধে হলে তার বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ আমরা করবো, সেই প্রতিবাদের অধিকার আমাদের আছে। আমাদের টাকায় চলা পুলিশের কাজ সেখানে যাতে অন্য কেউ এসে আঘাত না করতে পারে তার নিরাপত্তা দেয়া।
এখানে আলোচনা/প্রতিবাদের সম্পর্ক সরকারের সাথে সরকার নির্ধারক জনগণের।
প্রতিবাদ জিনিষটাই এমন যে এর কোনো ব্যাকরণ নেই। আপনি কখনো নিয়ম মেনে প্রতিবাদ করতে পারবেন না। কোনো সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আপনি যাই করবেন, সেটাই এখানে নিয়ম।
কিন্তু এতে যদি কারো ক্ষতি সাধিত হয়, আন্দোলনকারী যদি সহিংস হয়, সেটা প্রতিবাদ করারও সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে।
একজন পুলিশ সদস্য তার দায়িত্ব পালনে কী কী করতে পারবে, সেটাও জনগণের ভোটের নির্বাচিত সরকার নির্ধারণ করে দেয়।
সহিংস আচরণ ঠেকানোর জন্য প্রথম ধাপে টিয়ার গ্যাস স্প্রে করে। এর সাথে থাকে জল কামান।
এরপর আসা লাঠিচার্জ।
এরপর যদি পুলিশকে আঘাত করে তাহলে রাবার বুলেট ফায়ারের নির্দেশনা আসে। কিন্তু তাও হাটুর নিচে।
হাটুর উপরে কখনো পুলিশকে জনবিক্ষোভে গুলি করার অনুমতি দেয়া হয়না।
স্পেশাল অভিযানের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র লিথাল বুলেট ফায়ারের অনুমতি দেয়া হয়। সেটার জন্য উপরের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা থাকে।
আমাদের টাকায় দেয়া গুলি কখনো আমাদের উপর করার এখতিয়ার পুলিশের নেই। এমনতো না যে আমরা উপনিবেশে আছি।
কিন্তু আমরা দেখলাম পুলিশ এখন কারো
অনুমতির প্রয়োজন হয়না। চাইলো আর গুলি করে আমাদের ভাইদের মেরে ফেললো।
এই সাহস তাদের কে দিয়েছে?
অনেকেই বলে পুলিশের উপর হামলা হলে কি চেয়ে চেয়ে দেখবে?
তার জন্য উপরের নির্দেশনা গুলো আছে।
বৈশ্বিক গণতন্ত্রের স্কোরে বাংলাদেশ এখন উত্তর কোরিয়ার সহযাত্রী।
গণতন্ত্রের অর্থই হলো সরকার তাই সিদ্ধান্ত নিবে যা আমরা চাইবো।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যদি বলে মোদী আসবেনা, তাহলে মোদী আসবেনা। এটা এদেশের জনগণের সিদ্ধান্ত।
দেশের এতজন মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করছে, প্রতিবাদ মিছিল করছে, তাহলে সেখানে মোদিকে কোন বাংলাদেশ আনছে।
যারা দুদিন ধরে মিছিল করছে, বিক্ষোভ করছে, গুলি খাচ্ছে তারাও এদেশের জনগণ। তারা কেউ পাকিস্তান বা ভারতের নাগরিক না।
বাংলাদেশে তাই হবে যা এদেশের অধিকাংশ মানুষ চাইবে।
এখন তারা কোন পন্থি, তারা কোন গোষ্ঠির অংশ সেটা এখানে আলোচনার কোনো বিষয় না।
তারা নাগরিক এবং তারা তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারতে হবে, এটাই হলো স্বাধীনতা।
কোনো আন্দোলনে সহিংসতা কাম্য নয়। দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি কাম্য নয়, যারা করবে তাদের আইন অনুযায়ী ধরে শাস্তি দেয়া যাবে। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের উপর গুলি চালানোর অধিকার নেই।
যাদের হুকুমে এই গুলি চলেছে, তাদের পতন হতে হবে। এই হত্যার দায় তাদের নিতে হবে।
আপনি যদি নিজেকে বাংলাদেশি মনে করেন আর ভাবেন আপনি স্বাধীনতা চান, তাহলে এই হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার আপনাকে স্ট্রিক্টলি চাইতে হবে।
যদি কিন্তু নেই। ও এ করেছে, সেই করেছে,ও মুর্তি ভাঙলো কেন, ছবিতে আগুন দিলো কেন! এসব হাংকিফাংকি কথা চলবেনা।
প্রতিবাদের সময় যাই করবে সেটাই প্রতিবাদ। রাষ্ট্রকে তার নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে হবে।
আমি গুলি চালানো সব পুলিশের এবং তাদের হুকুমদাতাদের বিচার চেয়ে গেলাম, আপনি না চাইতে পারলে নিজেকে বাংলাদেশি ভাববেন না।