সেলসিয়াস স্কেল চেনে না কে? বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে সবাইকেই এই স্কেল নিয়ে পড়তে হয়।
আজকে এই স্কেলের প্রণেতা এন্ডার্স সেলসিয়াস এর জন্মদিন । জন্ম: ২৭ নভেম্বর, ১৭০১ - মৃত্যু: ২৫ এপ্রিল, ১৭৭৪)
এই বিজ্ঞানীর জীবনী নিয়ে উইকিপিডিয়ায় লেখা আছে। তাই বেশীকিছু না লিখে আমরা বরং অন্যদিকে নজর দিই।
বিশ্বের প্রতিটি দেশ তাপমাত্রা মাপে সেলসিয়াসে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র বাদে। যুক্তরাষ্ট্র মাপে ফারেনহাইটে। সেলসিয়াস একটা যুক্তিসঙ্গত মাপকাঠি। সেলসিয়াসে হিমাঙ্ক ধরা হয় শূন্য ডিগ্রী আর স্ফুটনাঙ্ক ১০০ ডিগ্রী। অন্যদিকে ফারেনহাইটের হিসাবটা আবার বিদঘুটে। ফারেনহাইটে হিমাঙ্ক ধরা হয় ৩২ ডিগ্রী আর স্ফুটনাঙ্ক ২১২ ডিগ্রী। আগের ফারেনহাইটে হিসাব বাদ দিয়ে সবাই মেট্রিক পদ্ধতিতে চলে যাওয়ার সময় থেকে সেলসিয়াসের হিসাব চালু হয়েছে। শুধু আমেরিকাই গোঁ ধরে আগের ফারেনহাইট হিসাবটা আঁকড়ে আছে। অথচ এর পরিণতি অনেক সময় বিপর্যয়করও হয়েছে। মার্কিন হিসাব আর মেট্রিক হিসাবের মধ্যে রূপান্তরের একটি বিভ্রাটে নাসার সাড়ে ১২ কোটি ডলার মূল্যের একটি নভোযান মঙ্গলগ্রহের বায়ুম-লে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তাপমাত্রা পরিমাপের এমন এক প্রাচীন ব্যবস্থা আঁকড়ে ধরে আছে কেন? এর জন্য দায়ী হলো ইতিহাসের সর্বকালের দুই বড় ভিলেনÑ ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ ও মার্কিন কংগ্রেস।
অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে অর্থাৎ আজ থেকে ৩শ’ বছর আগেও ফারেনহাইট পদ্ধতিটা সত্যিই খুব দরকারী ও কার্যকর ছিল। এই পদ্ধতির আবিষ্কর্তা ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট নামে এক জার্মান বিজ্ঞানী। তরুণ বয়স থেকে তিনি থার্মোমিটার নিয়ে বেশ আচ্ছন্ন ছিলেন। কারণ সে সময় তাপ মাপার ব্যাপারটা এক বড় সমস্যা ছিল। ২৮ বছর বয়সে একজোড়া থার্মোমিটার তৈরি করে তিনি বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। দুটো থার্মোমিটার একই রিডিং দিয়েছিল। এর আগে কেউ এ কাজ করেনি। তাঁর ব্যবহৃত স্কেলকেই আজ বলা হয় ফারেনহাইট।
পানি ও লবণের দ্রবণ যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় ঘটে, ফারেনহাইট সেটাকে ধরেছিল শূন্য ডিগ্রী। তিনি মানুষের শরীরের গড় তাপমাত্রা পরিমাপ করেছিলেন ৯৬ ডিগ্রী, যদিও তা ঈষৎ বেঠিক ছিল। ফারেনহাইটের হিসাব অনুযায়ী স্ফুটনাঙ্ককে ২১২ ডিগ্রী ও হিমাঙ্ক ৩২ ডিগ্রীতে ধার্য করা হয়।
১৭২৪ সালে ফারেনহাইট ব্রিটিশ রয়াল সোসাইটির সদস্যপদ লাভ করেন এবং তাঁর পদ্ধতি গোটা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অনুসৃত হয়। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে বিশ্বের বিশাল ভূখ- ব্রিটেনের করতলগত হয়। এর ফলে তাপামাত্রা পরিমাপের ফারেনহাইট পদ্ধতিও বিশ্বের অধিকাংশ এলাকায় আদর্শ তাপমাত্রায় পরিণত হয়।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে তাপামাত্রা পরিমাপের আধুনিক মেট্রিক পদ্ধতি ‘সেলসিয়াস’ চালু হয়ে যায়। সেলসিয়াস পদ্ধতি ১৭৪২ সালে আবিষ্কার করেছিলেন সুইডিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এন্ডার্স সেলসিয়াস। ১৯৭০ সালে সেলসিয়াস পদ্ধতিকে মেট্রিক পদ্ধতির অঙ্গীভূত করা হয়। সহজ-সরল রূপ ও বৈজ্ঞানিক উপযোগিতার কারণেই মেট্রিক পদ্ধতি এবং সেই সঙ্গে সেলসিয়াস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্যে সকল পরিমাপ মেট্রিক পদ্ধতিতে শুরু হয় ১৯৬৫ সালে। ব্রিটেনের সাবেক সমস্ত উপনিবেশেও একই ব্যাপারে ঘটে। কোন কোন দেশে ব্রিটেনের আগে ঘটে, যেমন ভারত। আবার অন্যদের পরে ঘটে, যেমন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। একই সময় সর্বত্র এসব পরিবর্তন লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রও মেট্রিক পদ্ধতিতে যাবার কথা ভাবতে থাকে। মেট্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরের জন্য কংগ্রেস ১৯৭৫ সালে একটি আইনও পাস করে। গঠিত হয় মেট্রিক বোর্ড।
কিন্তু সেই আইন আর কার্যকর হয়নি, এর প্রতি বিরোধিতার কারণে। কার্যকর হতে পারেনি, কারণ মেট্রিক পদ্ধতি প্রবর্তনকে বাধ্যতামূলক না করে করা হয়েছিল স্বেচ্ছাভিত্তিক। এ ব্যাপারে জনগণের মতামতের বড় ভূমিকা ছিল। বিপুলসংখ্যক মানুষ তাপ বা ওজন পরিমাপের নতুন পদ্ধতি শিখতে চায়নি। হাইওয়েতে কিলোমিটার সাইন দেয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে গাড়ি চালকরা। আবহাওয়া পর্যবেক্ষকরা সেলসিয়াসে পূর্বাভাস পাঠের কথা শুনে ক্ষেপে যায়। ক্রেতারা কিলোগ্রামে কেনাকাটার সম্ভাবনার কথায় বিরক্ত হয়। জনগণের এমন মন-মেজাজ লক্ষ্য করে প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ১৯৮২ সালে মেট্রিক বোর্ড ভেঙ্গে দেন। কংগ্রেস যেভাবে এই আইনটি তৈরি করে, তাতে এর বাস্তবায়ন মুখ থুবড়ে পড়ে এবং আমেরিকা যে ফারেনহাইটে-ই তাপমাত্রা মাপবে, তা সুনিশ্চিত হয়। মেট্রিক পদ্ধতির বাইরে থাকার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আজ বিশ্বে কার্যত একা। শুধু বার্মা ও লাইবেরিয়া তার সঙ্গে আছে।
- Muhammod Mahdi Hasan Saikot
Wiki Link
The Sixth Sens মুভিতে একটা বাচ্চার গল্প দেখানো হয়, যার সিক্সথ সেন্স খুব ভালো কাজ করে অথবা সে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ।
এই ছেলের একটা গুরত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, সে মৃত মানুষদের হাঁটাচলা করতে দেখতে পায় এবং তারা তার কাছে সাহায্য চায়। তার ভাষ্যমতে সবাই তাদের দেখতে পায় না এবং তাদের পছন্দমত লোকেরাই তাদের দেখতে পারে।
বাসায় প্রায়শই রাতে মৃত আত্মারা তার কাছে আসতো এবং কথা বলতে চাইতো। এদের থেকে দূরে থাকতে সে নিজ বেডরুমের এক কোণায় কাপড় দিয়ে একটা তাবুর মতো বানায় এবং সেখানে শুধুমাত্র যিশুর মূর্তি রাখে। ( এ কাজটা আমিও করতাম এবং নিজেকে লুকিয়ে ভাবতাম কেউ আমাকে দেখছে না 😁)তার বিশ্বাস যিশুই শুধু তাকে ওদের হাতে থেকে রক্ষা করতে পারে। যখনি সে ভয় পায় বা অস্বাভাবিক কিছু দেখে, তখনি সে এই ছোট্ট তাবুর ভেতরে চলে আসে। এটা তার একটা আস্থার জায়গা, যেখানে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারেনা।
আমাদের প্রায় সবারি (অথবা কয়েকজনের) মনের মধ্যেও এরকম একটা স্পেশাল জায়গা আছে। বাচ্চাটার বেডরুম কে যদি আমাদের মনের জগত বলি তাহলে তার ভেতরে আরো একটি গোপন জায়গা থাকে, যাকে আমি তুলনা করছি ঐ তাবুটার সাথে। মনে অনেকের আনাগোনা থাকলেও ঐ জায়গা খুবই নির্দিষ্ট। হতে পারে একজন বা দুজন এই জায়াগায় প্রবেশের সুযোগ পায়।
কিন্তু যে এই স্থান অর্জন করে নেয়, সে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায়। শত চেষ্টাতেও তার স্থানচ্যুতি সম্ভব না। সেই মানুষ্টা হয় তার সবচেয়ে আস্থার জায়গা। যেকোনো সমস্যা বা সংশয়ে সে আগে এই মানুষ্টার কাছে ছুটে যাবে। যেকোনো কাজ এর সাথে শেয়ার করবে। সবকিছুতেই তার একটা অলিখিত ভাগ থাকবে।
এমনও হয়, মনের অগোচরে তার সাথে কথা হবে, সবসময় সে না থাকলেও মনে হবে আমার একজন আছে। তার অবস্থানকে বলে যায় মনের মণিকোঠায়!
সে জায়াগাটার দরজা সবসময় বন্ধ থাকে ।
এরকম আরো একটা দরজার কথা সম্ভবত লালন বলেছেন তার গানে। আট কুঠুরি নয় দরজা। একই নামে সমরেশ মজুমদারের একটি বইও আছে।
আট কুঠুরি মানুষের শরীরের আটটা ক্যাভিটি বা ভেসেল। মাথার খুলি, ডান-বাম দুই ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, পাকস্থলী, দুই কিডনি আর কোলন। আর এই আটটির সঙ্গে শরীরের নয়টি দ্বার যুক্ত। তিনতলা হল, মস্তিস্ক, কোমর থেকে শরীরের ঊর্ধ্বভাগ এবং নিম্নভাগ। নয় দরজা মানুষের শরীরের নয়টা এনট্রান্স বা এক্সিট - দুই চোখ, দুই নাকের ফুটো, মুখ, দুই কানের ফুটো, আর বাকি দুইটা জননাঙ্গ ও পায়ু।
মনের সেই ছোট্ট কুঠুরির মধ্যের মানুষটা যদি হারিয়ে যায়, তবুও বাকী ৮ কুঠুরি আপনাকে হয়ত বাঁচিয়ে রাখবে, কিন্তু ৯ দরজার বাইরেও যে দরজাটা আছে, সেটা বন্ধ থেকে যাবে।
Easy to enter,
Difficult to erase!
Difficult to erase!
November 11, 2018
No comments
ফেসবুক এখন প্রতি ৪টি পোস্ট পর বিজ্ঞাপন দেখায়। আগে এতটা ছিলোনা।
বাংলাদেশে যখন ফেসবুক আসে, তখন খুব কম সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করতো। আর মূল দেশের বাইরে হওয়ায় এদেশে তথা উপমহাদেশের মানুষদের নিয়ে ব্যবসা করা তাদের জন্য সহজ কাজ ছিলোনা।
এখানে ব্যবসা করতে হলে তাদের ধীর কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা করতে হত।
সেজন্য তারা নিয়ে এলো ইন্টারনেট ফর অল। ফ্রিতে ইন্টারনেট ব্রাউজিং।
এই সার্ভিস এর কারণে উপমহাদেশীয় নিজের খেয়ে পরের মোষ তাড়ানো এবং নিজের সম্পর্কে উদাসীন মানুষদের একইকাতারে নিয়ে আসা সহজ হল। ফলে ট্রেন্ড ফলো করতে বা অন্যদের সাথে কানেক্টেড থাকতে, যেকারণেই হোক সবার একটা করে ফেসবুক একাউন্ট হয়ে গেলো। এবং ব্যপারটা এমনভাবে করা হল যাতে মোটের উপর মনে হয় সবাই ফ্রি সার্ভিস পাচ্ছি এবং নিজের কাজ হয়ে যাচ্ছে। তাদের লাভ হলেও তাতে আমার কী?
অবস্থা এমন হল যে এখন ফেসবুক একাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে গেলো। ফেসবুক এখন ৬ষ্ঠ মৌলিক চাহিদা হয়ে গেলো। ভার্সিটির ক্লাস শিডিউল, কোচিং এর ক্লাস, অফিস কন্টাক্টও এখন ফেসবুক নির্ভর। একদিন ফেসবুকে না গেলে আপনার ক্লাস মিস হয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে বেশীরভাগ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করায় কোম্পানিগুলোও বাধ্য হয়ে ফেসবুক কে তাদের মার্কেট প্লেস হিসেবে নিতে শুরু করলো। বেশী ইউজার হওয়ায় এখানে বিজ্ঞাপন দেয়া বেশী লাভজনক। তাছাড়া এখানে দ্রুত পরিচিত হবার চান্সও বেশী। ফলে সবার টার্গেট ফেসবুক মার্কেটিং।
প্রথমদিকে একটি দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত এখন ফেসবুককে করেছে সবচেয়ে বড় অনলাইন প্ল্যাটফরম হিসেবে।
অন্যদেশের সাথে উপমহাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় পার্থক্য, ওরা চাইলে যেকোনো সাইটে চলে যেতে পারে, কিন্তু এখানকার মানুষ এতটাই ফেসবুক নির্ভর যে, তারা মূলত ইন্টারনেট বলতে ফেসবুক বোঝে। এবং এরা ইমেইল করতে শেখার আগে ফেসবুকে ইভটিজিং করা শেখে। যেকারণে দেখা যায় এডমিশন টাইমে ফেসবুকের গ্রুপ গুলোতে প্রশ্ন দেখা যায়- ভাইয়া আমাকে ওমুক ভার্সিটির লিংক দেন!
ফ্রিতে খাবার দিয়ে তার থেকে সবচেয়ে বড় মূনাফা আদায় করে নেয়ার সফল উদাহরণ ফেসবুক।
অন্যদেশের মানুষ যখন ডাটা চুরির পর ফেসবুক ছাড়ছে, তখন দেখবেন এদেশের মানুষ বলে আমার ডাটা দিয়ে ফেসবুক কী করবে? ঘুরাঘুরি, চেক ইন আর সেলফি আপলোড করা ছাড়া ফেসবুকে আমার কিছু নেই। এই যাদের সিকিউরিটি সেন্স, তাদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়?
ফেসবুক সহ অনলাইন কোম্পানিগুলোর মূল শক্তি ডাটা। ডাটা মানে আপনার প্রতিদিনের কাজের হিসেব। আপনি কী করেন, কখন ঘুমান, ঘুম থেকে উঠেন, কী ধরণের খাবার খান, কোথায় ঘুরতে যান, কোন সময় কীরকম ড্রেস পরেন - এসবই।
আপনার এই সামান্য ডাটাগুলো দিয়েই অনেক বড় কাজ করে ফেলা সম্ভব, তা কি ভেবেছেন?
উদ্ভাস এর উদাহরণ দিই। উদ্ভাস যখন ভর্তি নেয়, তখন আপনার কিছু ডাটা রাখে। এগুলা সবাইই রাখে। জন্মতারিখ, বাসা কোথায়, কোথায় পড়েন এসব।
প্রতিবার আপনার জন্মদিন কেউ মনে না রাখলেও উদ্ভাস আপনাকে ঠিকই শুভেচ্ছা জানাবে। ঘুমত থেকে উঠে যখন জন্মদিনের মেসেজ দেখবেন, তখন মনের অজান্তেই তাদের প্রতি একটা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ফেলবেন। এটাই ডাটার শক্তি। উদ্ভাস আপনার টাকা চায়নি। কিন্তু আপনি তাদের নাম উচ্চারণ করেছেন, এটাই তাদের অর্জন। এরপর কাউকে উদ্ভাস সম্পর্কে বলতে আপনি অবশ্যই পজিটিভ কিছু বলবেন। এটাই তাদের ব্যবসা প্রসার ঘটাবে।
আরেকটু বড় করি ব্যাপারটা। রকমারি ডট কম উদ্ভাসের প্রতিষ্ঠান। উদ্ভাসে যারা কোচিং করে তারা আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম জানে- অন্যরকম গ্রুপ, পাই ল্যাবস, টেক শহর, অন্যরকম বিজ্ঞানবক্স ইত্যাদি। এই নাম গুলো তাদের নিয়মিত শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যরা খুব বেশী জানেনা। এই যে এতগুলো ছেলে কোচিং করে, তাদের সবার কাছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন হয়ে গেলো।
এটা দেশীয় উদাহরণ।
একই কাজ করে ফেসবুক, গুগল, ইয়াহু সহ অন্যরা- যারা শুধু অনলাইনেই বিদ্যমান।
ফেসবুক আপনার ডাটাগুলো নিয়ে বিশাল ডাটাবেজ সাজিয়ে রেখেছে। সেখানে আপনার প্রতিটা ডাটা অনুযায়ী আপনাকে আলাদা ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। আর এই কাজটা যে সিস্টেম করেছে, তার নাম হল মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
সেগুলো নিয়ে পরে বলবো।
একই কাজ করে গুগল, ইয়াহু সহ অন্যরা। গুগলের মূল কাজ ছিলো সার্চ সেবা দেয়া। এতে তাদের আয় নেই। বরং তাদের আয় হল আপনি কী ধরণের জিনিষ সার্চ করেন, সে অনুযায়ী আপনার সামনে বিজ্ঞাপন হাজির করা।
গুগল সার্চের পরে আসে এডওয়ার্ড। আপনি যতগুলো ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন এবং সেগুলো যদি গুগল এডওয়ার্ডে রেজিসট্রেশন করা থাকে, তাহলে যে সাইটেই যান না কেন, গুগল তাদের বিজ্ঞাপন আপনার সামনে ঝুলিয়ে দিবে।
ফেসবুক এই কাজটা শুধু ফেসবুকে করে, কিন্তু গুগল করে পুরো ইন্টারনেট জগতে। বুঝেন অবস্থা!
অন্যদিকে উবারও আছে একইরকম কাজ নিয়ে। তাদের যেহেতু ওয়েবসাইটে কাজ নেই, তারা চেক করবে আপনার ফোন। ফোন দিয়ে আপনি কোন সাইট ভিজিট করেন, কখন কোথায় যান, যেতে কতক্ষণ লাগে এসব জানা তাদের দরকার। সে অনুয়ায়ী তারা আপনার আশে পাশে উবার এর ব্যবস্থা রাখবে।
মাইক্রোসফটের অবশ্য এসব জেনে কাজ নেই, তাদের কাজ প্রোডাক্ট বিক্রি করা। তাই প্রোডাক্ট এর আপগ্রেড এর জন্য তারা শুধু আপনার পিসির কনফিগারেশন চেক করে।
এখন জানা যাক, এসব ডাটা নেয়া আপনার জন্য কতটা ক্ষতিকর বা তাদের জন্য কতটা লাভজনক।
আপনার কাজের ডাটা নেয়া খুব একটা ক্ষতিকর বলে আমার মনে হয়না, বরং এতে আপনি সহজে সার্ভিস পাবার সুযোগ বাড়ে। কিন্তু সমস্যা হল তখনি, যখন সেই ডাটা নেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারো হাতে চলে যাবে। অর্থাৎ চুরি হবে।
চুরি হলে কী হবে?
চুরি হলে আপনার ডাটা দিয়ে অন্য কেউ আপনাকে হেনস্থা করতে পারবে সহজেই।
যেমন ধরুণ, আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি। যে রাজী হচ্ছে না। আমার ইচ্ছা তাকে তুলে আনবো। এখন আমি ফেসবুক এবং গুগলের সহায়তায় তার বিগত কয়েকদিনের ডাটা নিলাম। সে কখন কোথায় যায়, কিরকম গাড়ি ব্যবহার করে, বা ঘুরতে যায় কোথায় সে অনুযায়ী আমি প্ল্যান করে তাকে তুলে নিয়ে আসলাম। (উদাহরণ দিলাম আরকি, আমি এতটা খারাপ না !)
এবং এই কাজটা যে কেউ করতে পারে। এবং তার চিন্তা নিশ্চয় শুধু তুলে নেয়া হবেনা! সে আপনাকে কিডন্যাপ করে বড় অংক দাবী করবে। আপনার সিক্রেট বিজনেস ডিল ফাস করবে। অথবা প্রতিপক্ষের কাছে বিক্রি করে দিবে। আপনার কোনো সিক্রেট ছবি ফাস করেও আপনার ইমেজ নষ্ট করে দিবে।
এটা হল শুধু নরমাল ডাটা।
যদি আপনার ব্যাংক একাউন্টের খবর সে জানে, আপনার ক্রেডিট কার্ড নম্বর সহ অন্যান্য সব কিছুই তখন থাকবে বিপদে। ভাবতে পারেন? কতটা ভয়ানক!
আর যদি চুরি নাও হয়, তাহলে কি হবে? কোম্পানি এসব দিয়ে কী করবে?
কোম্পানি আপনার জন্য তাদের পণ্য সাজাবে। এটা আক্ষরিক অর্থে ক্ষতিকর না হলেও আপনার প্রাইভেসির জন্য খুবই ক্ষতিকর। আপনার সম্পূর্ণ চিন্তা তখন তারা চিন্তা করতে পারবে। এমন হবে যে আপনি কি করবেন না করবেন তা সম্পূর্ণ তারা নিয়ন্ত্রণ করবে। আপনা যখন যা দরকার, তার জন্য তারাই আপনাকে সাজেশন দিবে, আপনার চিন্তা শক্তিটা কাজ করার অপশন বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের পণ্যের জগতে আপনি ডুবে থাকবেন।
আর এই কাজটা করার জন্য এশিয়া হল সবচেয়ে উপযোগী জায়গা। কারণ ইউরোপে সিকিউরিটি আইন অত্যান্ত কড়া। আপনি কোন কাস্টমারের কোনো তথ্য নিতে তার জন্য যথেষ্ট কারণ দেখাতে হবে। কোনো নড়চড় হলেই জরিমানা। এবং আপনাকে ভয়াবহ শাস্তি পেতে হবে।
আগের একটা লেখায় লিখেছিলাম কেন এ আই তে চীন আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে থাকবে। কারণ চীনের মানুষের ডাটা নিয়ে ভাবনা নেই। তাই সহজেই তাদের ডাটা নিয়ে ব্যবহার করা যায়। যে কাজটা ইউরোপ এ পারবেন না। আর এ আই হল আপনার ডাটা দিয়ে আপনার জন্য কাজ করা। আপনি কখন কি করবেন না করবেন তা বের করাই হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কাজ।
এখন আসি পাঠাও প্রসঙ্গে।
পাঠাও যা করেছে তা হল, আপনার ফোনে যা আছে তার সবকিছু নেয়া। অন্যরাও এসব করে তবে তার জন্য কারণ বলে নেয়। কিন্তু পাঠাও কোনো কারণ না দেখিয়েই কাস্টমারের ডাটার উপর বেমালুম হস্তক্ষেপ চালিয়ে।
ফোনের সব কনভার্সেশন থেকে শুরু করে কন্টাক্ট লিস্ট এবং আপনার সব এপের ডাটাও তাদের কাছে আছে।
পার্থক্য অনুমতি নেয়া তে। যদিও খুব কম বাংলাদেশীই সিকিউরিটি সম্পর্কে অবগত এবং এপের টার্মস এন্ড কন্ডিশন পড়ে দেখে। তাই এসব অনুমতি চাইলেও বেশীরভাগ হ্যা করে দেয়।
এর আগে গুগল নিয়ে কথা উঠলেও তা সহজেই ধামাচাপা পড়ে যায়। কারণ আমরা এসব নিয়ে ভাবী না। তবে নতুন সাইবার সিকিউরিটি আইনে এসব নিয়ে নির্দেশনা আসছে। শাস্তির বিধান থাকছে। বাংলাদেশি কাস্টমারদের কী কী ডাটা চাওয়া যাবে তার নির্দেশনা দেয়া থাকবে।
আসলে অনলাইন জগতে কেউই নিরাপদ না। আপনার প্রতিটি ডাটা কেউ না কেউ নজরদারী করছে এবং সেভাবে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
তবে আপনি চাইলে তাদেরকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, আপনার অনলাইন জগত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।
যদি ফেসবুকের কথাই ধরি- আপনি যদি ফেসবুকে সবকিছু শেয়ার না করেন, তাহলে অনেকাংশে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারেন।
কিছু পরামর্শ-
১। নিজের আইডিতে নাম পরিচয় ছাড়া গোপন কিছু রাখবেন না। বাসার ঠিকানা, বাবা মা, সন্তান সহ অন্যদের পরিচয় আড়ালে রাখুন। শুধু যেটুকুতে আপনি মানুষ হিসেবে অস্তিত্ব আছে বোঝায় ওতটুকু।
২। জন্মদিন এবং বন্ধু তালিকা হাইড করে রাখুন। চাইলে ফেসবুক লক সিস্টেম ব্যবহার করে বন্ধু তালিকার বাইরের মানুষের কাছে আপনার পুরো প্রোফাইল হাইড করতে পারেন।
৩। ছবিগুলোতে গার্ড লক ব্যবহার করবেন। মেয়েদের ছবি ফেসবুকে খুব বেশী না দেয়াই ভালো।
৪। ফিশিং লিংক বা অপরিচিত কোনো সংবাদ লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকবেন। ইন্টারনেট সিকিউরিটি ব্যবহার করতে পারেন।
৫। ফেসবুক কে নিজেকে প্রকাশ করার পরিবর্তে শুধুমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রাখার চেষ্টা করুন। নিজের পার্সোনাল এবং সিক্রেট কোনোকিছু শেয়ার করবেন না।
এগুলো প্রাইমারি লেভেলের কাজ। এ থেকে আপনার আইডি হ্যাক হলেও রিস্ক কম থাকে। আর ডাটা কম থাকলে হ্যাক হবার রিস্ক কম।
আর ফেসবুক কাজ করে আপনার কার্যক্রম এর মাধ্যমে। আপনি যদি সবসময় ইঞ্জিনিয়ারস ডায়েরির পোস্ট লাইক দেন, তাহলে সেরকম পোস্টই সামনে আসবে, আর যদি সার্কাজম এর পোস্ট লাইক দেন, তাহলে সারাদিন ট্রল পোস্ট আপনার সামনে ঘুরতে থাকবে। আর এ ভিত্তিতেই ফেসবুকে আপনাকে বিজ্ঞাপন দেখাবে।
নিজের মতো অনলাইন জগত সাজাতে ফেসবুকে ফলো লিস্টেও শুধুমাত্র আপনার মতো মানুষদের রাখুন। আপনার ফ্রেন্ড যদি ট্রল পোস্ট এ লাইক দেয় তাহলে তা আপনার সামনেও আসবে। তাই অপছন্দের কাজ করে এরকমদের আনফলো করুন।
আজ এ পর্যন্তই। পাঠাওকে চাইলে ফোন থেকে রিসাইকেল বিনে পাঠিয়ে দিতেই পারেন। কিন্তু অন্য যারা একাজ করে তাদেরকেও পাঠাতে হবে।
এরচেয়ে ভালো হয় আনস্টল করে আবার ইন্সটল করুন এবং কন্ডিশন এ ক্লিক করার আগে অনুমতি দেয়ার বিষয় গুলোতে টিক চিহ্ন তুলে দিন।
ধন্যবাদ!
দুঘন্টা টাইপ করে আমি এখন খেতে গেলাম
Muhammod Mahdi Hasan Saikot
Civil Engineering Department
Faridpur Engineering College
November 10, 2018
No comments
সিঙ্গার কর্পোরেশনের জন হয়েছিলো এখন থেকে ১৬৭ বছর আগে, ১৮৫১ সালে।
তবে আজকের দিনের বিশেষত্ব হল , আজ স্যার আইজ্যাক ম্যারিট সিঙ্গার এর জন্মদিন।
Edward Harrison May - Isaac Merrit Singer (October 27, 1811 – July 23, 1875)
মানুষ পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার পর ধন ধৌলত আর সম্মান রেখে যায়, স্যার ম্যারিট সেসাথে রেখে গেছেন ২৪ জন সন্তান!
ম্যারিট ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বলা হয়ে থাকে ইঞ্জিনিয়ারের গফের অভাব হলেও বউ এর অভাব হয়না, তবে সিঙ্গার এর ক্ষেত্রে দুটোই পর্যাপ্ত ছিলো। একে একে সে ৫ জন এর সাথে সংসার পাতে!
হাতের পরিবর্তে যন্ত্রের সাহায্যে সেলাইয়ের প্রচলন হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। বিশ্বের প্রথম শিল্প বিপ্লবের সময় সেলাই মেশিন উদ্ভাবিত হয়। তবে এর আগেও সেলাইয়ের কাজে খুব সাধারণ যন্ত্রের ব্যবহার ছিল। ১৮৪৬ সালে এলিয়েস হোউই এই যন্ত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনেন। প্রথমদিকে মেশিনগুলোর নকশা এমনভাবে করা হয়েছিল যা শুধু শিল্প-কারখানায় ব্যবহার করা যেত। তখন যন্ত্রবিশারদ স্যার আইজ্যাক ম্যারিট সিঙ্গার শিল্প-কারখানার পাশাপাশি ঘরে ব্যবহার উপযোগী সেলাই মেশিন তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। ১৮৫১ সালে ধরা করা মাত্র ৪০ ডলার পুঁজি নিয়ে বাসায় ব্যবহার উপযোগী সেলাই মেশিন উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেন। তার নামানুসারেই কো¤পানির নাম রাখা হয় সিঙ্গার। তিনিই প্রথম সেলাই কলে স্কেল সংযোজন করেন। সিঙ্গার মূলত এলিয়াসের সেলাই মেশিনের সামান্য পরিমার্জন সাধন করেন। মেশিনের চাহিদার কারণে এর বিক্রি বেড়ে যায়। বাড়তে থাকে পুঁজির পরিমাণও।
১৮৭৬ সালে সিঙ্গার মাল্টিন্যাশনাল কো¤পানিতে পরিণত হয়। কো¤পানিটি পৃথিবীর বৃহত্তম ব্যক্তিগত সেলাই কল তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান করে নেয়। ১৮৮৯ সালে প্রথম ইলেকট্রিক সেলাই কল বাজারে আনে সিঙ্গার। তখন পৃথিবীজুড়ে এ নমুনার সেলাই মেশিন ছড়িয়ে পড়ে। এ মেশিন ব্যবহৃত হয় হোসিয়ারি শিল্পে। হাত বা পাচালিত মেশিনগুলোর চেয়ে ইলেকট্রিক মেশিন দিয়ে নকশা করা, ফুল তোলা ও বিশেষ ধরনের সেলাইসহ সাধারণ কাজও সহজে এবং কম সময়ে করা যায়। ফলে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ সালে সিঙ্গার প্রথম বাংলাদেশে আসে। পরে ১৯২০ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি শাখা চালু করে। বর্তমানে সারা দেশেই এই কো¤পানির আউটলেট রয়েছে। বাংলাদেশে একাধিক কারখানাও করেছে।
১৯৮৩ সালে সিঙ্গার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। ২০০১ সালে তারা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৮৮ টাকা। তাদের অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৭৭ কোটি টাকা। বাজারে প্রায় ৭ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার রয়েছে। প্রতিবছর তারা মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দিচ্ছে।
জন্মদিনে এই মহান অভিনেতা, ব্যবসায়ী, উদ্ভাবক, জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনুরাগী, প্রেমসম্রাট ও সর্বপরি প্রকৌশলীকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
উইকি
আমাদের সময়
তবে আজকের দিনের বিশেষত্ব হল , আজ স্যার আইজ্যাক ম্যারিট সিঙ্গার এর জন্মদিন।
Edward Harrison May - Isaac Merrit Singer (October 27, 1811 – July 23, 1875)
মানুষ পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার পর ধন ধৌলত আর সম্মান রেখে যায়, স্যার ম্যারিট সেসাথে রেখে গেছেন ২৪ জন সন্তান!
ম্যারিট ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বলা হয়ে থাকে ইঞ্জিনিয়ারের গফের অভাব হলেও বউ এর অভাব হয়না, তবে সিঙ্গার এর ক্ষেত্রে দুটোই পর্যাপ্ত ছিলো। একে একে সে ৫ জন এর সাথে সংসার পাতে!
হাতের পরিবর্তে যন্ত্রের সাহায্যে সেলাইয়ের প্রচলন হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। বিশ্বের প্রথম শিল্প বিপ্লবের সময় সেলাই মেশিন উদ্ভাবিত হয়। তবে এর আগেও সেলাইয়ের কাজে খুব সাধারণ যন্ত্রের ব্যবহার ছিল। ১৮৪৬ সালে এলিয়েস হোউই এই যন্ত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনেন। প্রথমদিকে মেশিনগুলোর নকশা এমনভাবে করা হয়েছিল যা শুধু শিল্প-কারখানায় ব্যবহার করা যেত। তখন যন্ত্রবিশারদ স্যার আইজ্যাক ম্যারিট সিঙ্গার শিল্প-কারখানার পাশাপাশি ঘরে ব্যবহার উপযোগী সেলাই মেশিন তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। ১৮৫১ সালে ধরা করা মাত্র ৪০ ডলার পুঁজি নিয়ে বাসায় ব্যবহার উপযোগী সেলাই মেশিন উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেন। তার নামানুসারেই কো¤পানির নাম রাখা হয় সিঙ্গার। তিনিই প্রথম সেলাই কলে স্কেল সংযোজন করেন। সিঙ্গার মূলত এলিয়াসের সেলাই মেশিনের সামান্য পরিমার্জন সাধন করেন। মেশিনের চাহিদার কারণে এর বিক্রি বেড়ে যায়। বাড়তে থাকে পুঁজির পরিমাণও।
১৮৭৬ সালে সিঙ্গার মাল্টিন্যাশনাল কো¤পানিতে পরিণত হয়। কো¤পানিটি পৃথিবীর বৃহত্তম ব্যক্তিগত সেলাই কল তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান করে নেয়। ১৮৮৯ সালে প্রথম ইলেকট্রিক সেলাই কল বাজারে আনে সিঙ্গার। তখন পৃথিবীজুড়ে এ নমুনার সেলাই মেশিন ছড়িয়ে পড়ে। এ মেশিন ব্যবহৃত হয় হোসিয়ারি শিল্পে। হাত বা পাচালিত মেশিনগুলোর চেয়ে ইলেকট্রিক মেশিন দিয়ে নকশা করা, ফুল তোলা ও বিশেষ ধরনের সেলাইসহ সাধারণ কাজও সহজে এবং কম সময়ে করা যায়। ফলে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ সালে সিঙ্গার প্রথম বাংলাদেশে আসে। পরে ১৯২০ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি শাখা চালু করে। বর্তমানে সারা দেশেই এই কো¤পানির আউটলেট রয়েছে। বাংলাদেশে একাধিক কারখানাও করেছে।
১৯৮৩ সালে সিঙ্গার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। ২০০১ সালে তারা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৮৮ টাকা। তাদের অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৭৭ কোটি টাকা। বাজারে প্রায় ৭ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার রয়েছে। প্রতিবছর তারা মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দিচ্ছে।
জন্মদিনে এই মহান অভিনেতা, ব্যবসায়ী, উদ্ভাবক, জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনুরাগী, প্রেমসম্রাট ও সর্বপরি প্রকৌশলীকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
উইকি
আমাদের সময়
October 26, 2018
No comments
ট্যাক্সিডার্মি'র নাম শুনেছেন নিশ্চয়।
মৃত প্রাণীর চামড়া ব্যাবহার করে বিশেষ কৌশলে তার মধ্যে জীবন্ত রূপ ফুটিয়ে তোলাই হচ্ছে ট্যাক্সিডার্মি।
বিজ্ঞান ও শিল্পের এক স্বপ্নময় যুগলবন্দী হল ট্যাক্সিডার্মি।
বাংলাদেশের মানুষ এ ধরণের ব্যাপার সাধারণৎ হলিউডের সিনেমাতেই দেখে থাকে।
কেননা, শুধুমাত্র পৃথিবীর বিখ্যাত সব হিস্ট্রি মিউজিয়ামে( লন্ডন, বার্লিন, ওয়াশিংটন প্রভৃতি) প্রাণীদের এ ধরণের শিল্পময় উপস্থাপন দেখতে পাওয়া যায়।
এই কাজটা মোটেও সহজ নয়। দক্ষ ও নিপুণ ট্যাক্সিডার্মিস হতে গেলে ধৈর্য, একাগ্রতা ও প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে সৃজনশীল শৈল্পিক মনের অধিকারী হতে হয়।
আর সম্প্রতি এই গুণগুলোর এক অসাধারণ অভিপ্রকাশ ঘটেছে দুই বাংলাদেশী আমিনুল ও রায়হান এর মধ্যে। ২০১৬ এর ৫-৯ এপ্রিল জার্মানির বার্লিন শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ট্যাক্সিডার্মি কনফারেন্স-২০১৬ উপলক্ষে বাংলাদেশের এই সাফল্যটি এসেছে। বাংলাদেশের দুই তরুণ আমিনুল ও রায়হান চারটি ক্যাটাগরিতে মোট পাঁচটি পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। তার মধ্যে আমিনুল একাই জিতেছেন দুটি প্রথম ও দুটি দ্বিতীয় পুরস্কার। রায়হান জিতেছেন একটি দ্বিতীয় পুরস্কার। আর এ অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পেল দু'জন আন্তর্জাতিক মানের ট্যাক্সিডার্মিস্ট। ট্যাক্সিডার্মির জগতে বাংলাদেশও এখন অনন্য এক উচ্চতায়।
জার্মান ট্যাক্সিডার্মি সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২০০ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। এই প্রতিযোগিতার জন্য কয়েক মাস আগে আয়োজকরা প্রতিযোগিতার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে কয়েকটি প্রাণীর প্রজাতি নির্ধারণ করে। বিশ্বের অন্যান্য প্রতিযোগীর মতো বাংলাদেশের রায়হান ও আমিনুলও সেই চ্যালেঞ্জিং প্রাণী প্রজাতির ট্যাক্সিডার্মি শুরু করেন এবং তাদের সেই তৈরিকৃত প্রাণীগুলো নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। দু'জনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে পাস করে বের হয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকে জার্মানির অ্যাফোর্ট শহরে অবস্থিত ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে বিখ্যাত ট্যাক্সিডার্মিস্ট মার্কো ফিশারের তত্ত্বাবধানে ইউরোপের নামকরা সব প্রতিষ্ঠানে ট্যাক্সিডার্মির বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন আমিনুল ও রায়হান।
এর আগে ২০১৪ সালে (২২-২৭ এপ্রিল) ইতালিতে অনুষ্ঠিত 'ইউরোপিয়ান ট্যাক্সিডার্মি চ্যাম্পিয়নশিপ' প্রতিযোগিতায় এই তরুণদ্বয় যুগ্মভাবে ইউরোপের সব প্রতিযোগীকে হারিয়ে দিয়ে 'বেস্ট ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড' শাখায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন।
'ইউরোপিয়ান ট্যাক্সিডার্মি চ্যাম্পিয়নশিপ'_ এ ধরনের একটি প্রতিযোগিতা যা সাধারণত চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়। এবারে এই প্রতিযোগিতা ইতালির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রোমানদের স্মৃতিবিজড়িত এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্বাক্ষরবাহী লংগরন শহরে গত এপ্রিল মাসে (২২-২৭) অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপের পনেরোটি দেশ থেকে প্রায় ১০০ প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
বিশ্বে ১০০ বছর ধরে ট্যাক্সিডার্মির কাজ চললেও বাংলাদেশে তা মাত্র ৬-৭ বছর। আর এই অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দু'বার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করল।
বিশ্বে অনেকগুলো ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম থাকলেও বাংলাদেশে একটিও নেই। তবে আশার কথা, ঢাকাতে একটি হিস্ট্রি মিউজিয়াম নির্মানের কাজ চলছে। এরপর প্রতিটি বিভাগেই একটি করে মিউজিয়াম করার পরিকল্পনা রয়েছে ।
বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে কিংবা ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন প্রভৃতি কারণে নানা ধরনের অসংখ্য প্রাণী মারা যায়। ট্যাক্সিডার্মির সাহায্যে মৃত সেসব প্রাণীর অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করে তা থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব। ট্যাক্সিডার্মিস্টরা হচ্ছেন ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অন্যতম মানবসম্পদ। তাই দু-দুটো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত আমিনুল ও রায়হান বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ একাধিক ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের জন্যও সম্পদ হতে পারেন। বাংলাদেশ অপেক্ষায় রইল এই দুই তরুণের।
এডমিশন মৌসূমে ছেলেপেলেদের সবচেয়ে হতাশা দেখা যায় কোনো বিষয়ে পড়বে তা নিয়ে। লোকমুখে সিএসই, ইইই কিংবা বিবিএর নাম শুনে শুনে সবাই এগুলোকেও দামী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। কিন্তু সমস্যা হল, অন্য বিষয়গুলোর সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়না। যেকারণে উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণীবিজ্ঞান সহ অন্যান্য বিষয়গুলকে কেউ গুরত্ব দেয়ান। কারণ, এগুলো নিয়েও যে সৃজনশীলতা দিয়ে অনেক গুরত্বপূর্ণ কাজ করা যায়, তা তাদের সামনে তুলে ধরা হয়না।
আমিনুল ও রায়হান ভাই এর প্রাণীবিজ্ঞান থেকে পড়ে পৃথিবীর নামিদামী পুরষ্কার অর্জন নিঃসন্দেহে জুনিয়রদের প্রাণিবিজ্ঞান পড়ার প্রতি আগ্রহ একটু হলেও বাড়াবে।
(দুবছর আগের লেখা থেকে...)
এ সম্পর্কিত আরো লেখাঃ
October 24, 2018
No comments
কখনও কি বিস্ময়ের উদ্রেক হয়েছে যে কেন সি ডিফল্ট ড্রাইভ আপনার কম্পিউটার এর? কেন A অথবা B নয়?
কেন উইন্ডোজ সবসময় সি ড্রাইভ এ সেভ হয়???
আপনি যদি প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার ব্যবহারকারী হন, তাহলে সম্ভবত প্রশ্নের উত্তর জানেন.
কিন্তু যদি আপনি কম্পিউটারের অনেক ভক্ত নাও হন , তবুও নিশ্চয় আপনার মন একবার প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে যেত. কেন এমএস উইন্ডোজ কম্পিউটারের মধ্যে ডিফল্ট ড্রাইভ সি ড্রাইভ?
এখন আমাদের উত্তর দেখা যাক. ,
দেখুন যখন প্রথমদিকে কম্পিউটারের বিকশিত হয়েছে, তখন সাধারণত ব্যাপক অভ্যন্তরীণ সংগ্রহস্থল ডিভাইস এর সাথে পতিচয় হয়নি. পরিবর্তে তখন একটি ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভ ছিল. এবং যে ড্রাইভে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল এ ।
ফ্লপি ডিস্ক দুই মাপ, 5 1/4 "এবং 3 1/2"
. তাই কম্পিউটারের উভয় ধরণের ফ্লপির জন্য উভয় A এবং B লেবেল ছিল
শুধুমাত্র 1980 হার্ড ড্রাইভ প্রমিত হয়ে ওঠেছিল. আর তাই তখন কথাটি সি লেবেল করা হয় এবং এই হার্ড-ড্রাইভ কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম-এ সঞ্চয় করতে ব্যবহার করা হয়. ধীরে ধীরে, ফ্লপি ডিস্কের অপ্রচলিত হয়ে ওঠে এবং কম্পিউটারের ফ্লপি ড্রাইভ হারিয়ে যায়. A এবং B ড্রাইভ বিকাশ হয় এবং C রয়ে যায়.
অবশ্যই, এই নিয়ম পাথরের মধ্যে খোদাই করা নেই, এবং যদি আপনি সঠিক নিয়মানুযায়ী জন্য নামের প্রারম্ভে আপনার ইচ্ছামত নামের ড্রাইভ চান, আপনি সহজে administrative অধিকার দিয়ে তা করতে পারেন।
September 30, 2018
No comments
এই ছেলে আর আমার মধ্যে এক্টাই মূখ্য পার্থক্য, আমি বেঁচে আছি আর ও নেই। বাকী গল্পগুলো একই রকম।
ওর জন্ম আর আমার জন্ম একই উপজেলায়, তারপর বেড়ে উঠা শেষে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় যাওয়া।
ওর বাসা আমাদের বাসা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, চৌমুহনীতে।
উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য দুজনের যাত্রাই ঢাকা। আমি সরকারি বিজ্ঞান আর ও রমিজউদ্দিন। এর পরের গল্পটাও একই হতে পারতো। হয়ত এই ছেলেটারো ইচ্ছা ছিলো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তার আর হল কই?
হাতিয়া থেকে যারা বাইরে থাকে তাদের বাসায় যাওয়া হয় বছরে দুবার। দুই ঈদে। এর বাইরে পরিক্ষার লম্বা ছুটি হলে তখন। ওর মাও বসে ছিলো ঈদে ছেলে বাসায় আসবে। আমার পরিবারো এমন। ভাইবোন অপেক্ষায় আছে কবে আমি বাসায় যাবো।
এই ছেলের দিনমজুর বাবা মারা গেছে ছোটবেলায়। তারপর চার ভাইকে মানুষ করার দায়িত্ব একা কাঁধে তুলে নিয়েছেন তার মা। থাকার ঘর নেই, একচিলতে জমি নেই, হাতে টাকা নেই। এমন পরিস্থিতি যাদের আছে অথবা যারা গ্রামে বাস করেন তারাই এর প্রকৃত রূপ চিন্তা করতে পারেন। তবে মনোয়ারা বেগম দমে যাননি। ছেলে দুটিকে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন।
সেই ছেলেটি এবার বাসায় ফিরে গেছে এক মাস আগে।
অথচ তার একটা স্বপ্ন ছিলো, সে হতে পারতো একজন দেশ গড়ার কারিগর।
এরকম স্বপ্ন আমাদের সবারই থাকে এবং প্রতিদিন ভাঙ্গে। কোটি মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গের কাছে একজন হয়তো কিছু না। কিছুদিন আগেও আন্দোলন চলছিলো কোটা সংস্কার নিয়ে। অনেকগুলো ছেলে যাদের স্বপ্ন ছিলো দেশের সেবা করবে, মেধা থাকা স্বত্বেও সিট খালী নাই সাপেক্ষে তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। তাই তারা শেষ উপায় রাস্তায় এসে দাড়িয়েছিলো। একজন মানুষ কখন রাস্তায় দাঁড়ায় তা আপনি নিজে না দাঁড়ালে বুঝতে পারবেন না। স্বাভাবিকভাবে একা সবার সামনে গিয়ে দাড়াতেও আমাদের হাটু কাঁপে, সেখানে ছেলেগুলো প্রাণের মায়া ত্যাগ করে পুলিশের মার খেয়েছে, ভাবতে পারেন?
আমাদের স্বপ্ন ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতা মানে চিন্তার স্বাধীনতা, বক্তার স্বাধীনতা। পাকিস্তান তা বন্ধ করে দিয়েছিলো। তাই আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছি । দাঁড়িয়েছি বলতে দাঁড়াতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশে সেই সুযোগটাও নেই। আপনার সরকার আপনার শত্রু। আপনি কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেই আপনাকে পেটানো হবে। আপনার কোনো স্বপ্ন থাকতে পারবেনা, কোনো চিন্তার স্বাধীনতা থাকতে পারবেনা। আপনি কিছু বলার আগে ভাবতে হবে আপনার জীবন যাবে কিনা!
আপনি কি স্বাধীন?
আমার দেশের রাস্তায় কোনো নিয়ম কানুন নেই। মন্ত্রীরা টাকা খেয়ে যাকেতাকে গাড়ির লাইসেন্স দিচ্ছে আর ড্রাইভারকে দিচ্ছে মানুষ মারার লাইসেন্স। সেখানে আপনি প্রতিবাদ জানাতে গেলে পুলিশ দিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের মারা হচ্ছে।
জীবন যাপনের জন্য চাকুরি করবো, সেখানে আমি সমান অধিকার পাবো, সেটা আমাকে রক্ত দিয়ে আদায় করতে হবে একটি স্বাধীন দেশে ?
একটা দেশের ৯০ ভাগ মানুষ যে দাবী জানাচ্ছে সেটা আদায় করতেও আমাকে রক্ত দিতে হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক দেশে মানুষ যা চাইবে তাই হতে হবে, কিন্তু এ সরকার তা করছেনা। কেন বলুনতো?
আপনি যাই বলবেন তার জন্যেই আপনাকে রক্ত দিতে হবে। এরপর বিরোধী মত বলে দমে যেতে হবে।
একটি দেশের প্রতিটি ক্ষেত্র যখন দলীয়করণ এবং ধরে ধরে দলীয় লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়, সেটা একটি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়।
এই রাষ্ট্রকে আমি গনতান্ত্রিক মনে করিনা। বরং এটি একটি স্বপ্ন মেরে ফেলা রাষ্ট্র।
প্রতিদিন অসংখ্য তরুণের সাথে আমার কথা হয়। তাদের বেশীরভাগের স্বপ্ন কিভাবে এদেশ থেকে যাওয়া যায়। অন্তত নিজের পেট চালিয়ে বাঁচা যাবে এমন একটি দেশের নাম তারা জানতে চায়।
এ দায় কার?
আপনি বলবেন একদিনে সব চেঞ্জ সম্ভব না। আমি বলবো এরকম হয়েছে কয়দিনে?
গত দুদিনে ঢাকা শহরের চেহারা বদলে গেছে। কেন গেছে? কারণ যারা করেছে তারা দলীয়করণ করেনি।
তারা জানে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল। আপনাদের মতো ক্ষমতালোভী না।
হাজার হাজার ছেলে যখন মেধা থাকা সত্বেও কোটার জন্য চাকরি বঞ্চিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটে পড়ে বয়স শেষ করে চাকুরিতে আবেদনের যোগ্যতা হারায়। দলীয় নিয়োগের শিক্ষকরা যখন পড়াতে না পেরে ছাত্রদেরও অযোগ্য করে তোলে এবং ছাত্ররা ব্যর্থ হয়, সেই দায় অবশ্যই নীতিনির্ধারক সরকারের।
গত দুমাসে ঢাকায় রক্ত জরানো জীবিত আন্দোলনকারীদের কাছে এই দুটো লাশ খুব বেশী কিছুনা, এরা মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। কিন্তু যারা বেঁচে থেকে মরছে, তাদের খুনের দায় কে নেবে???
আপনাকে চেঞ্জ আনতে হবে। আপনার নিজের মধ্যে এবং যারা আপনাকে নেতৃত্ব দেয় তাদের মধ্যে।
বুড়ো গরু হাটতে পারে, দৌড়াতে পারেনা। নাকি ভুল বললাম কিছু?
ওর জন্ম আর আমার জন্ম একই উপজেলায়, তারপর বেড়ে উঠা শেষে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় যাওয়া।
ওর বাসা আমাদের বাসা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, চৌমুহনীতে।
উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য দুজনের যাত্রাই ঢাকা। আমি সরকারি বিজ্ঞান আর ও রমিজউদ্দিন। এর পরের গল্পটাও একই হতে পারতো। হয়ত এই ছেলেটারো ইচ্ছা ছিলো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তার আর হল কই?
হাতিয়া থেকে যারা বাইরে থাকে তাদের বাসায় যাওয়া হয় বছরে দুবার। দুই ঈদে। এর বাইরে পরিক্ষার লম্বা ছুটি হলে তখন। ওর মাও বসে ছিলো ঈদে ছেলে বাসায় আসবে। আমার পরিবারো এমন। ভাইবোন অপেক্ষায় আছে কবে আমি বাসায় যাবো।
এই ছেলের দিনমজুর বাবা মারা গেছে ছোটবেলায়। তারপর চার ভাইকে মানুষ করার দায়িত্ব একা কাঁধে তুলে নিয়েছেন তার মা। থাকার ঘর নেই, একচিলতে জমি নেই, হাতে টাকা নেই। এমন পরিস্থিতি যাদের আছে অথবা যারা গ্রামে বাস করেন তারাই এর প্রকৃত রূপ চিন্তা করতে পারেন। তবে মনোয়ারা বেগম দমে যাননি। ছেলে দুটিকে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন।
সেই ছেলেটি এবার বাসায় ফিরে গেছে এক মাস আগে।
অথচ তার একটা স্বপ্ন ছিলো, সে হতে পারতো একজন দেশ গড়ার কারিগর।
এরকম স্বপ্ন আমাদের সবারই থাকে এবং প্রতিদিন ভাঙ্গে। কোটি মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গের কাছে একজন হয়তো কিছু না। কিছুদিন আগেও আন্দোলন চলছিলো কোটা সংস্কার নিয়ে। অনেকগুলো ছেলে যাদের স্বপ্ন ছিলো দেশের সেবা করবে, মেধা থাকা স্বত্বেও সিট খালী নাই সাপেক্ষে তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। তাই তারা শেষ উপায় রাস্তায় এসে দাড়িয়েছিলো। একজন মানুষ কখন রাস্তায় দাঁড়ায় তা আপনি নিজে না দাঁড়ালে বুঝতে পারবেন না। স্বাভাবিকভাবে একা সবার সামনে গিয়ে দাড়াতেও আমাদের হাটু কাঁপে, সেখানে ছেলেগুলো প্রাণের মায়া ত্যাগ করে পুলিশের মার খেয়েছে, ভাবতে পারেন?
আমাদের স্বপ্ন ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতা মানে চিন্তার স্বাধীনতা, বক্তার স্বাধীনতা। পাকিস্তান তা বন্ধ করে দিয়েছিলো। তাই আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছি । দাঁড়িয়েছি বলতে দাঁড়াতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশে সেই সুযোগটাও নেই। আপনার সরকার আপনার শত্রু। আপনি কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেই আপনাকে পেটানো হবে। আপনার কোনো স্বপ্ন থাকতে পারবেনা, কোনো চিন্তার স্বাধীনতা থাকতে পারবেনা। আপনি কিছু বলার আগে ভাবতে হবে আপনার জীবন যাবে কিনা!
আপনি কি স্বাধীন?
আমার দেশের রাস্তায় কোনো নিয়ম কানুন নেই। মন্ত্রীরা টাকা খেয়ে যাকেতাকে গাড়ির লাইসেন্স দিচ্ছে আর ড্রাইভারকে দিচ্ছে মানুষ মারার লাইসেন্স। সেখানে আপনি প্রতিবাদ জানাতে গেলে পুলিশ দিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের মারা হচ্ছে।
জীবন যাপনের জন্য চাকুরি করবো, সেখানে আমি সমান অধিকার পাবো, সেটা আমাকে রক্ত দিয়ে আদায় করতে হবে একটি স্বাধীন দেশে ?
একটা দেশের ৯০ ভাগ মানুষ যে দাবী জানাচ্ছে সেটা আদায় করতেও আমাকে রক্ত দিতে হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক দেশে মানুষ যা চাইবে তাই হতে হবে, কিন্তু এ সরকার তা করছেনা। কেন বলুনতো?
আপনি যাই বলবেন তার জন্যেই আপনাকে রক্ত দিতে হবে। এরপর বিরোধী মত বলে দমে যেতে হবে।
একটি দেশের প্রতিটি ক্ষেত্র যখন দলীয়করণ এবং ধরে ধরে দলীয় লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়, সেটা একটি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়।
এই রাষ্ট্রকে আমি গনতান্ত্রিক মনে করিনা। বরং এটি একটি স্বপ্ন মেরে ফেলা রাষ্ট্র।
প্রতিদিন অসংখ্য তরুণের সাথে আমার কথা হয়। তাদের বেশীরভাগের স্বপ্ন কিভাবে এদেশ থেকে যাওয়া যায়। অন্তত নিজের পেট চালিয়ে বাঁচা যাবে এমন একটি দেশের নাম তারা জানতে চায়।
এ দায় কার?
আপনি বলবেন একদিনে সব চেঞ্জ সম্ভব না। আমি বলবো এরকম হয়েছে কয়দিনে?
গত দুদিনে ঢাকা শহরের চেহারা বদলে গেছে। কেন গেছে? কারণ যারা করেছে তারা দলীয়করণ করেনি।
তারা জানে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল। আপনাদের মতো ক্ষমতালোভী না।
হাজার হাজার ছেলে যখন মেধা থাকা সত্বেও কোটার জন্য চাকরি বঞ্চিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটে পড়ে বয়স শেষ করে চাকুরিতে আবেদনের যোগ্যতা হারায়। দলীয় নিয়োগের শিক্ষকরা যখন পড়াতে না পেরে ছাত্রদেরও অযোগ্য করে তোলে এবং ছাত্ররা ব্যর্থ হয়, সেই দায় অবশ্যই নীতিনির্ধারক সরকারের।
গত দুমাসে ঢাকায় রক্ত জরানো জীবিত আন্দোলনকারীদের কাছে এই দুটো লাশ খুব বেশী কিছুনা, এরা মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। কিন্তু যারা বেঁচে থেকে মরছে, তাদের খুনের দায় কে নেবে???
আপনাকে চেঞ্জ আনতে হবে। আপনার নিজের মধ্যে এবং যারা আপনাকে নেতৃত্ব দেয় তাদের মধ্যে।
বুড়ো গরু হাটতে পারে, দৌড়াতে পারেনা। নাকি ভুল বললাম কিছু?
August 01, 2018
No comments
আত্মাহুতি। মানে নিজেকে খুন করা। এই নিজেকে কথাটার আমার কাছে অনেকগুলো জটিল ব্যাখ্যা আছে।
নিজের ব্যাপারটা অনেকরকম হয়। সেক্ষেত্রে আত্মাহুতি শব্দটার প্রায়োগিক ব্যাখ্যা অনেকরকম। নিজের প্রাণ করে দেয়াটা একধরণের আত্মাহুতি হতে পারে।
এক্ষেত্রে একটা অর্থ দাড়াচ্ছে, নিজেকে সবার কাছে প্রকাশ করে দেয়। যতদিন আপনি বেচে থাকবে, ততদিন আপনার সম্পর্কে অন্যদের আচরণ আর আপনি মারা যাবার পর অন্যদের আচরণ একইরকম হবেনা। তখন আপনি সবার কাছে উন্মুক্ত হয়ে যাবেন। এই ব্যাপারটাকে আমি মৃত্যু হিসেবে চিন্তা করি। আপনার স্বাধীনতা, ব্যক্তিত্বে আপনার অধিকার থাকবেনা।
আমার অনেকগুলো সিক্রেট ব্যাপার আছে। এই ব্যাপারগুলো প্রকাশ হয়ে যাওয়াটাও আমার কাছে আত্মহুতি দেবার মতো। যখন এই ব্যাপারগুলো আমি ছাড়াও আরো অনেকি জানবে, তখন সেটাও আমার জন্য আত্মাহুতিমূলক। এখানে "নিজের" ব্যাপারকে আত্মাহুতি দেয়া হয়েছে।
আত্মহত্যা নিয়ে আমার একটা বিশাল প্রবন্ধ আছে। সেখানে লিখেছিলাম, মানুষ কেন আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়।
এরমধ্যে প্রধান কারণ হয়, যখন সে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তার নিজের কাছে কিছু থাকেনা। তার সবকিছুই পাবলিক হয়ে যায়।
অন্যভাবে, সে যখন মানসিকভাবে প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ে, বা সবার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়। অথবা খুব কাছের কারো কাছে অপমানিত হয়।
ওপেন সোর্স সামাজিকতার যুগে এখন মানুষের পার্সোনাল বলে কিছু থাকেনা। ফলে তার ব্যক্তিগত কাজেও অনেকের প্রভাব চলে আসে। এক্ষেত্রে সে সিদ্ধান্থীনতায় ভোগে এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এক পর্যায়ে আত্মাহুতির মতো ভয়ানক সিদ্ধান্ত নেয়।
আত্মাহুতি দেয়ার চেয়ে, না দিয়ে কেন বেঁচে থাকে- সেটা নিয়ে আলোচনা বেশী ভালো মনে হচ্ছে।
যখন কেউ প্রচন্ড মানসিক আঘাত পায়, তবুও মৃত্যুর পথ বেঁচে নেয়না, এক্ষেত্রে সবসময় এমন কেউ দায়ী থাকে, যার জন্য সে মরতে পারেনা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই একজন মা, বাবা, বা বিশেষ কেউ একজন হয়- যার মুখের দিকে তাকিয়ে সে মরতে পারেনা। এই একজন অনেক বড় একটা ফ্যাক্টর, যার কারণে সে মৃত্যুর চেয়েও বেশী কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকে।
আমি এমন কয়েকজন প্যাশেন্ট পেয়েছি, যারা বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ ঐ একজন। কখনো সে নিজেই আমাকে বলেছে - সে একজনের জন্য বেঁচে আছে, কখনো আমিই তাকে ঐ একজনের দোহায় দিয়ে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়েছি।
যখন কেউ বলে আমি মরতে চাই, এরমানে সে নিশ্চয় এমন কিছু প্রত্যক্ষ করেছে - যার মধ্যে সে তার সর্বোচ্চ অবলম্বন হারিয়েছে। এবং আমি এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী যা পর্যবেক্ষণ করেছি তাহল, ঐ ঘটনাটা যদি সে ছাড়া আর কেউ না জানে, তাহলে আর আত্মাহুতি দেয়ার সম্ভাবনার চেয়ে অনেকে জেনে ফেললে, তার সম্ভবনা বেশী হয়।
কারণ একা একা অনেককিছুই চেপে রাখার যায়, যা অনেকেই জেনে ফেললে কষ্ট শুধু বেড়েই চলে। আর সেই জেনে ফেলাটাকেই আমি বলি আমার গোপন কথাটা অন্যেরা জেনে ফেলা বা সেই কথাটার আত্মাহুতি, যেটা শারিরীক আত্মাহুতির চেয়েও বেশী কষ্টের। আর যেজন্য সবাই শারিরীক ব্যাপারটাকেই গ্রহণ করতে বেশী পছন্দ করে !!
নিজের ব্যাপারটা অনেকরকম হয়। সেক্ষেত্রে আত্মাহুতি শব্দটার প্রায়োগিক ব্যাখ্যা অনেকরকম। নিজের প্রাণ করে দেয়াটা একধরণের আত্মাহুতি হতে পারে।
এক্ষেত্রে একটা অর্থ দাড়াচ্ছে, নিজেকে সবার কাছে প্রকাশ করে দেয়। যতদিন আপনি বেচে থাকবে, ততদিন আপনার সম্পর্কে অন্যদের আচরণ আর আপনি মারা যাবার পর অন্যদের আচরণ একইরকম হবেনা। তখন আপনি সবার কাছে উন্মুক্ত হয়ে যাবেন। এই ব্যাপারটাকে আমি মৃত্যু হিসেবে চিন্তা করি। আপনার স্বাধীনতা, ব্যক্তিত্বে আপনার অধিকার থাকবেনা।
আমার অনেকগুলো সিক্রেট ব্যাপার আছে। এই ব্যাপারগুলো প্রকাশ হয়ে যাওয়াটাও আমার কাছে আত্মহুতি দেবার মতো। যখন এই ব্যাপারগুলো আমি ছাড়াও আরো অনেকি জানবে, তখন সেটাও আমার জন্য আত্মাহুতিমূলক। এখানে "নিজের" ব্যাপারকে আত্মাহুতি দেয়া হয়েছে।
আত্মহত্যা নিয়ে আমার একটা বিশাল প্রবন্ধ আছে। সেখানে লিখেছিলাম, মানুষ কেন আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়।
এরমধ্যে প্রধান কারণ হয়, যখন সে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তার নিজের কাছে কিছু থাকেনা। তার সবকিছুই পাবলিক হয়ে যায়।
অন্যভাবে, সে যখন মানসিকভাবে প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ে, বা সবার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়। অথবা খুব কাছের কারো কাছে অপমানিত হয়।
ওপেন সোর্স সামাজিকতার যুগে এখন মানুষের পার্সোনাল বলে কিছু থাকেনা। ফলে তার ব্যক্তিগত কাজেও অনেকের প্রভাব চলে আসে। এক্ষেত্রে সে সিদ্ধান্থীনতায় ভোগে এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এক পর্যায়ে আত্মাহুতির মতো ভয়ানক সিদ্ধান্ত নেয়।
আত্মাহুতি দেয়ার চেয়ে, না দিয়ে কেন বেঁচে থাকে- সেটা নিয়ে আলোচনা বেশী ভালো মনে হচ্ছে।
যখন কেউ প্রচন্ড মানসিক আঘাত পায়, তবুও মৃত্যুর পথ বেঁচে নেয়না, এক্ষেত্রে সবসময় এমন কেউ দায়ী থাকে, যার জন্য সে মরতে পারেনা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই একজন মা, বাবা, বা বিশেষ কেউ একজন হয়- যার মুখের দিকে তাকিয়ে সে মরতে পারেনা। এই একজন অনেক বড় একটা ফ্যাক্টর, যার কারণে সে মৃত্যুর চেয়েও বেশী কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকে।
আমি এমন কয়েকজন প্যাশেন্ট পেয়েছি, যারা বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ ঐ একজন। কখনো সে নিজেই আমাকে বলেছে - সে একজনের জন্য বেঁচে আছে, কখনো আমিই তাকে ঐ একজনের দোহায় দিয়ে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়েছি।
যখন কেউ বলে আমি মরতে চাই, এরমানে সে নিশ্চয় এমন কিছু প্রত্যক্ষ করেছে - যার মধ্যে সে তার সর্বোচ্চ অবলম্বন হারিয়েছে। এবং আমি এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী যা পর্যবেক্ষণ করেছি তাহল, ঐ ঘটনাটা যদি সে ছাড়া আর কেউ না জানে, তাহলে আর আত্মাহুতি দেয়ার সম্ভাবনার চেয়ে অনেকে জেনে ফেললে, তার সম্ভবনা বেশী হয়।
কারণ একা একা অনেককিছুই চেপে রাখার যায়, যা অনেকেই জেনে ফেললে কষ্ট শুধু বেড়েই চলে। আর সেই জেনে ফেলাটাকেই আমি বলি আমার গোপন কথাটা অন্যেরা জেনে ফেলা বা সেই কথাটার আত্মাহুতি, যেটা শারিরীক আত্মাহুতির চেয়েও বেশী কষ্টের। আর যেজন্য সবাই শারিরীক ব্যাপারটাকেই গ্রহণ করতে বেশী পছন্দ করে !!
July 06, 2018
No comments
হিরোর কি সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা আছে? নাকি সব মন গড়া আর আবেগের মিশেল।
ইতিহাস বলে সবকিছু আপেক্ষিক। বরং যে জয়ী হয়, ইতিহাস তাকেই বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, সে যেভাবেই জয়ী হোক না কেন!!
সিনেমায় সাধারণত দেখা যায় একজন খুব খারাপ লোক থাকে। সে সবসময় অত্যাচারী। আরেকজন খুব ভালো মানুষ। অন্যদের বিপদ থেকে রক্ষা করে। সে হয় নায়ক। নায়কের একজন নায়িকা থাকে। দূর থেকে দেখে কিংবা গল্পটাই। এমনভাবে বানানো যেন দর্শক দেখেই বুঝতে পারে কে হিরো। কিন্তু উল্টোভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, দুজনই কিন্তু নিজের কাজে উপযুক্ত যুক্তি নিয়ে আছে।
অথবা, যদি এমন হয়, দুজনই একটা কাজের আগ্রহী এবং দুজনরই পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু পাবে একজন। তখন আপনি কাকে হিরো আর কাকে ভিলেন বলবেন?
ইতিহাসে ফিরে যাই। প্রাচীন কাল থেকেই কিন্তু এমন দ্বন্দ্ব লেগে আছে। সেই আর্য-অনার্য দের যুদ্ধ থেকেই।
আমাদের পূর্বপুরুষ হল উপমহাদেশের অনার্য। তারা ছিল গুহাবাসী ও বিভিন্ন নদীর তীরে বসবাসকারী। আদিবাসীরা বিভিন্ন টোটেম বা গোষ্ঠিতে বিভক্ত ছিল। দৈত্য, রাক্ষস, পাখী, নাগ, অসুর এগুলা ছিল এখানকার আদিবাসীদের বিভিন গোষ্ঠী, শ্রেণী ইত্যাদিরই নাম।
বুঝতে অসুবিধা হয়না, অনার্যরা আর্যদের বিরুদ্ধে গেরিলা পদ্ধতি ও সামনাসামনি মুক্তির লড়াই অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু জয় হয় শেষ পর্যন্ত আর্যদের। তাড়াতে তাড়াতে অনার্যদের নিয়ে যাওয়া হয় সুদূর শ্রীলংকা পর্যন্ত। সেখানেও লড়াই হয়। রাম-রাবনের যুদ্ধ তারই স্মৃতিবাহী।
কিন্তু আর্যদের এ জয় শুধু প্রভুত্বে নয়, ছিল শিল্প-সংস্কৃতিরও জয়। ফলে অনার্য রাক্ষস খোক্ষসরা আর মানুষ থাকলো না, হয়ে গেলো দানব, অসুর, দৈত্য ইত্যাদি। এই অঞ্চলের সমগ্র ভারতীয় আদিবাসীরা জন্তুতে পরিণত হল ইতিহাসে।
অথচ কি আশ্চর্য, আমরা আমাদের সন্তানদের রাক্ষস খোক্ষসের নেতিবাচক গল্প শোনাচ্ছি। আর এভাবেই আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদের কাছে ভীতির এবং ইয়ার্কির পাত্র হয়ে উঠেছে।
অথচ এ লড়াই ছিল সমান। হিরো হবার কথা ছিল অনার্যদের, যারা নিজেদের প্রাপ্য অধিকার আদায়ে লড়াই করেছে। জোরদখলদারদের রুখতে জীবন দিয়েছে। তাদের আমরা হিরোর স্বীকৃতি দেয়ার কথা। কিন্ত হিরো হয়ে গেলো দখলদার আর্যরা। ইতিহাস জয়ীদের পক্ষেই লেখা হয়।
ভারতীয় পর্বে আসি। ১৭৫৭ তে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ে ইংরেজরা জয়ী হয়।
মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় সেই যুদ্ধে জয়লাভ করে লর্ড ক্লাইভ।
এ যুদ্ধের পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইংরেজ সাহিত্য ও অধ্যুষিত ভারতীয় উপমহাদেশ এ প্রচলন ছিল জাফর একজন অনুগত বীরসেনা ও সিরাজ ভীতু, কাপুরুষ, পরাজিত দেশদ্রোহী নবাব হিসেবে!!
যদিও অনেক পরে উপমহাদেশের মানুষ প্রকৃত সত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং মীর জাফর প্রতারক বিশ্বাসঘাতক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অথচ শুধুমাত্র পরাজয়ের ফলেই ভিলেন পেয়েছিল বীরের মর্যাদা। ইতিহাস এমনি হয়।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসি। ৭১ এ যদি বাঙ্গালিরা পরাজিত হত, তাহলে বিশ্বদরবারে সেদিনের ইতিহাস অন্যরকম হত। এখন বাংলাদেশীরা যেভাবে পাঠ্যবই এ পাকিস্তানিদের দখলবাজ, অত্যাচারী হিসেবে জানছে, তখন সেটা হত বাংলাদেশীরা। মুক্তিযোদ্ধারা হত দেশোদ্রোহী, গাদ্দার, যেটা যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই শেখ মুজিব, পাকিস্তান আর্মিতে বিদ্রোহ করা জিয়া, ওসমানী, মতিয়ুররা পেয়েছিলেন। অন্যদিকে পাকিস্তান আর্মির সৈন্যরা হত দেশপ্রেমী অকুতোভয় সেনা। এদেশে যারা তাদের সহযোগীতা করেছে, তারা হত অনুগত বন্ধু। সব জায়গায় তাদের কৃতিত্ব থাকতো। অথচ দুদলের লক্ষ্য ছিল জয়। পরিস্থিতি প্রেক্ষাপট বদলে দেয়। কে বীর আর কে ভিলেন তা পরিবর্তন হতে বেশীক্ষণ লাগেনা।
তাহলে বীর আর ভিলেন নির্ধারণের মানদণ্ড কি হবে? সিনেমায় ভালো আর খারাপ মানুষ দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিই। ইতিহাস পড়ে জানলাম যে জয়ী, তারা তাদের মতো ইতিহাস লেখে। প্রকৃত সত্য অধিকাংশ সময়েই আড়ালে থাকে। তাহলে আমি হিরো কাকে বলবো?
সমসাময়িক প্রেক্ষাপট এ আসি।
দুজন ছেলেমেয়ে পরস্পরকে ভালোবাসে। পরিবার রাজি হলে সবকিছু ঠিক আছে। মেয়েটাও এই ছেলেকে ছাড়া কিছু বোঝেনা। একেবারে রিয়েল লাভ।
মেয়েটাকে আরেকটা ছেলে পছন্দ করে। সে মেয়ের পরিবারকে ম্যানেজ করে তাকে বিয়ে করে ফেলে। পরিবারের বিরুদ্ধে যাওয়া সম্ভব না। তাই মেয়েটাও সবকিছু সহ্য করে নেয়। সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছা করে, কিন্তু পরিবারের দিকে তাকিয়ে কিছু করতে পারবেনা। পরের ছেলেটা সবই জানে। সে ইচ্ছা করেই এমন করেছে। সবকিছুই এখন তার।
সেও একদিন গল্প বলবে , আমি সবকিছু জয় করেছি। আরেকজন আমার কাছ থেকে ওকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তা হতে দিইনি।
হিরো কে হল?
June 20, 2018
No comments