ব্যস্ত এই শহরে প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষের দেখা মেলে। তাদের কয়জনকে আমরা আলদাভাবে চিনি? এদের মধ্যে কিছু মানুষ থাকে যারা অন্যান্য মানুষদের চেয়ে আলাদাভাবে নিজের জীবন পরিচালনা করে থাকে।
প্রায় সময় দেখা যায়, মেধাবী বা বুদ্ধিমান লোকজন গড়পড়তা লোকদের চেয়ে একটু আলাদা থাকতে চায়। তাই এটাই স্বাভাবিক, তারা প্রয়োজন ছাড়া অন্যদের সাথে কথা বলা একদম এড়িয়ে যায়। অপ্রয়োজনীয় দেখা সাক্ষাৎ তাদের খুবই অপছন্দ এবং এমনও হয় যে নিজদের সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতেও তাদের উপস্থিতি যতসামান্য চোখে পড়ে।
তারচেয়ে বড় ব্যাপার হল, এরকম লোকগুলো বেশী কথা বলা কিংবা তর্কের চেয়ে চুপচাপ শুনতে পছন্দ করে। কোলাহল ও ব্যস্তময় জীবনের চেয়ে দূরে একাকী জীবন যাপনে তাদের স্বাচ্ছন্দ্য সবচেয়ে বেশী।
The British Journal of Psychology, London School of Economics এর evolutionary psychologists সাতোশি খানজাওয়া ও Singapore Management University এর নরম্যান লি এর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানকার মূখ্য বিষয় হল একটি সুখী জীবনের জন্য কি কি উপাদান প্রয়োজন হয়। আধুনিক বিশ্বে অধিকাংশ মানুষ আর ব্যক্তিগত নির্দেশিকার জন্য পুরোহিত বা দার্শনিকদের কাছে যায়না; তার পরিবর্তে জরিপ গবেষক, অর্থনীতিবিদ, জীববিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানীদের কথা শুনছেন। এরকম মানসিকতার ১৫০০০ মানুষ নিয়ে এক জরিপে দেখা যায়, ঘনবসিত অঞ্চলে বসবাসকারি তাদের প্রায় সবাই নিজেদের নিয়ে সুখী, কারণ এদের মধ্যে খুব অল্পই আছে, যারা উচু চিন্তাধারী বা বুদ্ধিমান।
বর্তমান সময়ে সবাই সুখী হতে চায়। কিন্ত এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, এতো মানুষের মধ্যেও একা থেকে কিভাবে সুখী হওয়া যায়!! কেননা তারা এভাবেই নিজেদের পরিবেশ গড়ে নিয়েছে।
এই জরিপে সাতোশি ও নরম্যান দেখেছেন যে, অধিক মানুষের ভীড়ে থাকার চেয়ে ভালোবাসার মানুষের মধ্যে থাকাটাই তাদের বেশি পছন্দ এবং এতে বেশী ভালোলাগা কাজ করে। সমাজের অধীক মানুষের সাথে অনেক সময় ব্যয় কয়ার চেয়ে একজনের সাথে অল্পকিছুক্ষণ বেশি সুখী হতে সাহায্য করে। যার ফলে তাদের সুখী থাকার হারটাও বেশী।
বরং এও দেখা যায় যে, উচ্চ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন লোকজন বেশী মানুষের মধ্যে থাকলে বরং তাদের সুখী ভাবটা অনেক কমে যায়।
এটাকে গবেষকরা বলে থাকেন - উচ্চ বুদ্ধিমত্তার লোকদের নিম্ন জীবন সন্তুষ্টি ।
ওয়াশিংটন পোস্ট এর ক্যারোল গ্রাহাম এ ব্যাপারে বলেছেন- উচ্চ বুদ্ধিমত্তার লোকগুলো স্বল্পকালীন সামাজিকতার বিষয়ে সময় না দিয়ে এই সময়টা তাদের নিজেদের দীর্ঘমেয়াদী ফোকাস কাজ গুলোতে দিয়ে থাকেন। যা অধিক কার্যকর।
সুখ এর বিখ্যাত থিওরি, সাভান্না থিওরি অনুযায়ী, মানুষ সুখী হবার জন্য সেসকল কাজই করে, যা আদীম মানুষ করতে পছন্দ করতো। সাভান্না থিওরি অনুযায়ী, কম ঘনত্বের জনসংখ্যায় মানুষ বেচে থাকার জন্য বেশী বেশী আলাপচারিতের প্রয়োজন । এই গবেষণা অনুযায়ী, উচ্চ বুদ্ধিমত্তার লোকদেরকেও এখন নিজেদের বেশী আলাপচারিতে করতে হচ্ছে। কারণ অতীতেও মানুষজন কম ঘনত্বের অধীবাসী হওয়ায় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বেশী রাখতো। কিন্তু থিওরি আর রিয়েলিটি কি এক?? আমার মনে হয়না। মেধাবী লোকগুলা গম্ভীরই হয়ে থাকেন এবং সবসময় নিজেদের নিয়েই মেতে থাকেন।
তবে, বুদ্ধিমান বা মেধাবী লোকদের কথা কম বলা কিন্তু সমাজের জন্যই উপকারী। তারা তাদের সময় গল্প গুজবে ব্যয় না করে তাদের কাজে ব্যয় করে ফলে নিজের কাজে অগ্রগতিতে সক্ষম হয়। এবং সমগ্র মানবতার জন্য জীবনের মান অগ্রগতিতে সক্ষম হয়। সম্ভবত আধুনিক সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হচ্ছে জনসংখ্যার অধিকাংশই একসঙ্গে একসঙ্গে বসবাস করে, তাই ব্যক্তিবিশেষের কাছ থেকে ঘনিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সহায়তার পরিবর্তে বরং তা বাধাগ্রস্ত হয়।